বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১০:৪৪

শিরোনাম :
রেমিটেন্স আহরণে রূপালী ব্যাংকের ২ দিন ব্যাপী ক্যাম্পেইন সম্পন্ন সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা বরিশালের দুই উপজেলায় বৈধতা পেলেন ২৫ প্রার্থী ঝালকাঠিতে বেপরোয়া ট্রাক কেড়ে নিল ১৪ প্রাণ বরিশাল সদরে ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাদিস মীরের মনোনয়ন দাখিল বরিশালে তীব্র গরমে নাভিশ্বাস জনজীবন,বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ! বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জসিম উদ্দিনের মনোনয়নপত্র দাখিল বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এসএম জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র দাখিল দুই উৎসবের ছুটি শেষে বরিশাল থেকে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ ঈদ আনন্দ থাকতেই বরিশালে বইছে পহেলা বৈশাখের আনন্দ
গণস্বাস্থ্যের করোনা পরীক্ষার কিটকে আবেগের জায়গায় নিয়ে রাজনীতি করাটা অযৌক্তিক

গণস্বাস্থ্যের করোনা পরীক্ষার কিটকে আবেগের জায়গায় নিয়ে রাজনীতি করাটা অযৌক্তিক

dynamic-sidebar

বিশেষ প্রতিবেদক,আমিনুর রহমান শামীম : করোনা পরীক্ষার কিট উৎপাদনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র শতভাগ সফল হয়েছে বলে দাবি করেছেন এর প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তৈরি করা কিট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু কিট উদ্ভাবনের পর যেসব পদ্ধতি মেনে সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে হয়

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র তার কিছুই মানেনি। তাই তাদের কিট গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান।
গতকাল সোমবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেল আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ পরীক্ষার কিটস’ সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কিট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে যেসব অভিযোগ করেছেন, তা সত্য নয় তিনি বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে হেয় প্রতিপন্ন করার
চেষ্টা করছেন।
তাছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন পর্যন্ত কোন দেশকেই রেপিড কিটের অনুমোদন দেয়নি বলেও জানান মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান। এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এখন পর্যন্ত অনুমোদন না দেয়ায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র আবিষ্কৃত র‌্যাপিড কিটস পরীক্ষার আপাতত কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এবার মূল আলোচনায় আসি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র করোনা ভাইরাস সনাক্ত করার জন্য একটি কিট আবিষ্কার করেছে এবং তারা প্রেস কনফারেন্স করেছেন একথা দেশব্যাপী প্রচারিত হয়েছে, যা ইতিপূর্বে উল্লেখ করলাম। অনেকে বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া, ফেসবুক, নিউজ পোর্টালে লিখেছেন সেখানে সরকারের কেউ যাননি। হ্যাঁ কেউ যান নি। কিন্তু কেন যাননি তা কিন্তু কেউ লেখেন নি।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনা তথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী ও দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি সরকার ঠিক কাজটিই করেছেন। কারণ একটি ডায়াগনস্টিক কিট আবিষ্কার করে জনসাধারণের ব্যবহার করার জন্য অনেক গুলো স্টেপ পার করতে হয়।
ক) যে কোন গবেষণা দল ভাইরলোজি, ইম্যুনোলজি এবং ল্যাব সায়েন্স এর ভিত্তির উপর নির্ভর করেই একটি কিটের প্রোটোটাইপ আবিষ্কার করে।
খ) এই কিটটির কার্যকারিতা কিভাবে পরীক্ষা করা যায় সেটি নিয়ে তারা একটি প্রটোকল লিখবেন এবং সেটি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিবেন (বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি Bangladesh Medical Research Council [BMRC]).
গ) সেই প্রটোকলটি আপ্রুভড হলে তারা বা থার্ড পার্টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিটটির কার্যকারিতা নিয়ে একটি এপিডেমিওলজিকাল গবেষণা করবে।
ঘ) অত:পর গবেষণার সকল তথ্য উপাত্ত নিয়ে Directorate General Drug Administration (DGDA) এর কাছে জমা দিবেন এবং সম্ভব হলে ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে পাবলিশ করবেন।
ঙ) DGDA সকল তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করে পারমিশন দেবে এই কিটটি উৎপাদন এবং বাজারজাত করার।
এবার দেখি ডায়াগনস্টিক কীট নিয়ে আবেগ ও রাজনীতির জায়গায় আমরা কতগুলো ধাপ পার করেছি।
১। কেউ যদি শুরু থেকে সরাসরি দাবি করে বসবেন যে আমার টেস্ট কিট শতভাগ কার্যকর; কি করে বুঝলেন কার্যকর এটি কি কিনে নেবার জন্য বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে? নাকি উৎপাদনের জন্য অর্ডার দিয়েছে?
২। কেউ যদি এই সফলতার দাবি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন, তাহলে কি বলবেন যে তারা নিজেরা পরীক্ষা করে দেখুক আমি সত্যি বলছি কিনা!
৩। জনগণকে আপনার পক্ষে বলতে বলুন দেশে কিটের অভাব রয়েছে, সেটি নিয়ে বেশি বেশি কথা বলুন। মানুষের আবেগ, দেশপ্রেম এগুলি কাজে লাগান (যেমন: সাম্প্রতিক একটি ইন্টার্ভিউতে “বাংলাদেশি রক্ত” কথাটি প্রায় ৫-৬ বার উল্লেখ করা হয়েছে।)
৪। আপনি সরকারের সিস্টেমের “ভিকটিম” হিসেবে দাবি করুন। সরকার আপনাকে পদে পদে বাঁধা দিচ্ছেন সেটি বলতে থাকুন।
৫। যেকোনো প্রকার আলোচনায় বা প্রেস কনফারেন্সে আপনার চিফ সায়েন্টিফিক অফিসারকে না পাঠিয়ে আপনি নিজে যান। বৈজ্ঞানিক আলোচনা পরিহার করুন।
মানুষজনকে বলুন এটি খুব এ সহজ একটি পরীক্ষা – অনেকটা প্রেগ্নেন্সি বা ডায়েবেটিস এর টেস্ট এর মত।
সরকার কি আসলেই গণস্বাস্থ্যের র্যাপিড কিট আবিষ্কারের শত্রু? না। গণস্বাস্থ্যের কিটের প্রধান সমস্যাগুলি কি আসুন তা বোঝার চেষ্টা করি।
১। র্যাপিড কিট এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হল “ফলস নেগেটিভ”। অর্থাৎ একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে আপনি সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর ফলাফল ভয়াবহ কারণ আপনি তখন তাকে অন্যদের মাঝে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করছেন।
২। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও এই ধরনের র্যাপিড কিট কার্যকর হয়নি। এইটাই বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা। অনেক চাইনিজ কোম্পানি দাবি করেছিল এবং সেগুলি কিনে যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস এর মত দেশ ধরা খেয়েছে। একটু গুগল করে দেখুন, নিজেই বুঝতে পারবেন।
৩। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কিছু কিছু ব্যাপার দাবি করেছে যেগুলি মারাত্মক ধরনের সায়েন্টিফিক মিসকন্ডাক্ট বা রিসার্চ ইথিক্সকে ভায়োলেট করে। যেমন: তারা বলেছেন তারা বিদেশ থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর রক্ত পরীক্ষা করেছেন। যদি এটি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে এই পারমিশন তারা কোথায় পেয়েছেন। আবার তারা প্রাথমিক আবেদন পত্রে বলেছেন অ্যান্টিবডি টেস্ট করবেন, এখন তারা বলছেন যে অ্যান্টিজেন টেস্ট বের করেছেন। এই ধরনের অস্বচ্ছটা কিন্তু সায়েন্টিফিক মিসকন্ডাক্ট।
৪। যেহেতু র্যাপিড কিট দিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয় যে কারো করোনা ভাইরাস আছে কি না, তাই পিসিআর টেস্ট করতে হবে নিশ্চিত হবার জন্য। গণস্বাস্থ্য যেহেতু এটি বাণিজ্যিক লাভের জন্য করছে, তাহলে র্যাপিড কিট এবং পিসিআর টেস্ট দুটি করার অতিরিক্ত খরচ কে বহন করবে?
দেখুন, আমি আশাবাদী মানুষ। আমি আমার বাজির দান গণস্বাস্থ্যের কিটের পক্ষেই রাখতাম যদি না তারা সঠিকভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করতো। কিন্তু তারা বিজ্ঞানের মাঠে না খেলে রাজনীতির মাঠে খেলছে। এবং সেখানে সরকার রাজনীতির সঠিক চালটিই দিয়েছে। কারণ, সরকারের কেউ আজ থাকলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র বলত যে আমরা তাদেরকে দিয়েছি এবং তারা সেটি আটকে দিয়েছেন। অর্থাৎ দোষ সরকারের ঘাড়েই আসতো।
আসুন এই ক্রান্তিকালে রাজনীতি বাদ দিয়ে সঠিকভাবে বিজ্ঞানকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। বিজ্ঞানকে আবেগের জায়গায় নিয়ে রাজনীতি করাটা অযৌক্তিক। সবাই ঘরে থাকুন। নিরাপদ থাকুন।
জয় বাংলা।
জয় বঙ্গবন্ধু।

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net