দেখে ভালো লেগেছিলো স্থানীয় রাজনীতিবিদ এবং বুদ্ধিজীবীগণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সচল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনের প্রায় আর্ধ মাস পর হলেও শিক্ষকরা নিজেদের কিছু দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছিল সেটা দেখেও ভালো লেগেছিলো।
ভালো লাগার মতো দৃশ্য দেখলাম যখন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের ব্যানারে ছাত্র শিক্ষক কর্মকর্তা সবাই একজন জেঁকে বসা হুজুর প্রবৃত্তির রক্তচোষার কাছ থেকে দক্ষিণ বঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত করার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ একমাস ধরে চলা আন্দোলনের পরও শিক্ষক – শিক্ষার্থীদের আমরণ অনসনে বসার মতো নির্মম অবস্থা আমার মতো এই বরিশালের প্রতিটি মানবিক মানুষকে দুঃখিত করে, হৃদয়ে মোচড় দেয়। ভাবতে বাধ্য করে তবে কি সাড়ে আট হাজার শিক্ষার্থী এবং দেশের সর্বোচ্চ একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের জীবনের চেয়েও একজন স্বৈরাচারী ইমামুল হক রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে বেশি প্রিয়?
বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেছিলেন ঢাকার পর যদি আর কোথাও বিশ্ববিদ্যালয় হয় তবে সেটা হবে বরিশালে। কিন্তু সেই কথা বাস্তবে পরিণত করার জন্য বরিশালের সমস্ত সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের মানুষদের দীর্ঘ সংগ্রাম করে যেতে হয়েছে।তাই ২০১১ সালে যখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল বাসীকে বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দেন তখন থেকেই সবার আশা-আকাঙ্ক্ষা আর আবেগের জায়গা হিসেবে স্থান নেয় এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। কিন্তু বর্তমান ভিসি প্রতিটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে এ জনপদের প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গের কারণ হয়েছেন দীর্ঘ চারটা বছর ধরে, তাইতো এই নিয়ে তার বিরুদ্ধে মোট তিনবার আন্দোলন। অনিরাপদ ক্যাম্পাস, সেশনজট পূর্ণ শিক্ষাজীবন, আবাসন সমস্যা, নিয়োগে অস্বচ্ছতা,শিক্ষক সমাজে বিভাজন, প্রশাসন পরিচালনায় স্বজনপ্রীতি, মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চার কন্ঠরোধ ইত্যাদি ছিল তার এতটা সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার খতিয়ান। মহান বিজয় দিবসে ব্যাক্তিগত ‘গার্ডেন পার্টি’র বিরোধিতা করায় শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ উপাধি দেওয়া মানুষটি তার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য কতটা দুঃসাহস নিয়ে আন্দোলনকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেন ভাবতে অবাক লাগে!
আমি আগে লিখেছি, “ডঃ শামসুজ্জোহার মতো শিক্ষকদের দেশে শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলা শিক্ষক বড় বেমানান “। কিন্তু এখন বলতে বাধ্য হচ্ছি সাড়ে আট হাজার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ গড়ার কারিগর মহান শিক্ষকদের যিনি আজ আত্নহুতি দেবার মতো নির্মম জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন তাকে তার দুর্নীতি – অনিয়মপূর্ণ স্বেচ্ছাচারী শোষণনীতির জন্য আইনের কাঁঠগড়ায় দাঁড় করানো প্রয়োজন। যেকোনো ধরণের দূর্ঘটনার হাত থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে নিরাপদ রাখার জন্য কালবিলম্ব না করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সঙ্গে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলায়তন কাটিয়ে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টিতে ভুমিকা রাখা উচিত। সবার সম্মিলিত এই আন্দোলন এটাই নির্দেশ করে যে বরিশালের মাটিতে এমন কপট স্বেচ্ছাচারী ব্যার্থ ভিসির পদচিহ্ন কোনোভাবেই কেউ মেনে নেবে না।
লেখক : শফিক মুন্সি, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র আন্দোলন কর্মী।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply