শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৪:১০

শিরোনাম :
সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা বরিশালের দুই উপজেলায় বৈধতা পেলেন ২৫ প্রার্থী ঝালকাঠিতে বেপরোয়া ট্রাক কেড়ে নিল ১৪ প্রাণ বরিশাল সদরে ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাদিস মীরের মনোনয়ন দাখিল বরিশালে তীব্র গরমে নাভিশ্বাস জনজীবন,বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ! বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জসিম উদ্দিনের মনোনয়নপত্র দাখিল বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এসএম জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র দাখিল দুই উৎসবের ছুটি শেষে বরিশাল থেকে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ ঈদ আনন্দ থাকতেই বরিশালে বইছে পহেলা বৈশাখের আনন্দ সাংবাদিক মামুন অর রশিদের মায়ের মৃত্যুতে এস এম জাকির’র শোক
আমরা আধুনিক ঢাকার চেয়েও এখন নিরাপদ ঢাকার স্বপ্ন দেখি বেশি!

আমরা আধুনিক ঢাকার চেয়েও এখন নিরাপদ ঢাকার স্বপ্ন দেখি বেশি!

dynamic-sidebar

স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই অন্যদিকে রাজধানী হিসেবে ঢাকার বয়স ঐতিহাসিক ভাবে আরো অনেক বেশি। ইসলাম খান ১৬১০ সালে জাহাঙ্গীরনগর নাম দিয়ে ঢাকাকে বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার আগেও ১৬৬০,১৯০৫ এবং ১৯৪৭ সালে আরো তিনবার ঢাকা রাজধানীর মর্যাদা পায়। বাংলাদেশের চেয়েও এদেশের ঢাকা শহর পৃথিবীর ইতিহাসে বেশি পরিচিত এবং সমৃদ্ধ মর্যাদার অধিকারী। কিন্তু মর্যাদাবান এ শহরে আজ অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না! আশির দশক পর্যন্ত যে শহরে চারটি নদী দ্বারা বেষ্টিত হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সবুজ সুন্দর শহর ছিল সে শহর আজ ভয়ানক মৃত্যুপুড়ী।

সড়কে মৃত্যু, আগুনে মৃত্যু, পানিতে মৃত্যু, আততায়ীর হাতে মৃত্যু ইত্যাদি আজ নিয়মিত সংবাদের শিরোনাম। সর্বশেষ ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকা চকবাজারের নির্মম অগ্নিকান্ডের মাত্র সাইত্রিশ দিনের মাথায় অভিজাত এলাকা হিসেবে খ্যাত বনানীতে ঘটে গেল নির্মম অগ্নিকান্ডের ঘটনা।তারপর গুলশান ডিসিসি মার্কেট, তারপর ধানমন্ডির আবাসিক ভবন, এগুলোর আগে অনিরাপদ সড়কে মৃত্যুর মিছিল। ঢাকা যেন আজ এক দুঃস্বপ্নের মৃত্যকূপ!কার দিকে আঙুল তুলবেন? কতজনের দিকেই বা আঙুল তোলা যায়? আঙুল তোলাতুলি কিংবা অভিযোগের পাহাড় সৃষ্টি করার চেয়ে আসুন একটু সমস্যা ও সমাধানের দিকে নজর দেই। ঢাকা শহরের সকল সমস্যার গোড়া বলে যেটা ধরে নেওয়া যায় সেটা হচ্ছে জনসংখ্যার আধিক্য।

যারা সমস্যা ভোগ করে একটু হিসেব করে দেখুন সেই সমস্যা গুলোও তাদেরই সৃষ্টি। ছোট ছোট কিছু উদাহরণ দেই, এই যে বনানীর যে ভবনটিতে আগুন লাগলো বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের বরাতে জানতে পারলাম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই সেখানে নাকি আরো সাততালা করা হয়েছে অবৈধভাবে! এই অবৈধ অতিরিক্ত অংশ বৃদ্ধির পিছনে কিন্তু কাজ করেছে সেগুলো ভাড়া দেবার নিশ্চয়তা,ঢাকায় জনসংখ্যার আধিক্যের ফলে কোনোদিন ওই অতিরিক্ত অংশ যে ফাঁকা রাখতে হবে না এ ব্যাপারে লোভি মালিকপক্ষ ভালো করেই জানতো আবার অগ্নিকান্ডে ঝড়ে যাওয়া কিছু প্রাণ বাঁচানো যেত যদি ফায়ার ব্রিগেড দ্রুততার সহিত অগ্নি নির্বাপণ কাজ শুরু করতে পারতো কিন্তু তাদের কাজ শুরু করতে বিলম্বের কারণ উৎসুক জনতার ভিড়। অনিরাপদ সড়কেও কিন্ত এই অতিরিক্ত মানুষের অতিরিক্ত যানবাহন কোনোভাবেই দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। তো এই শহরের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কি করা যেতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরেই কিন্তু অনেক বড় বড় ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে পারে আমাদের প্রাণের শহর, জাদুর শহর ঢাকা। তবে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে আমরা আরেকটা প্রশ্নের উত্তর জেনে নেবো যে, এই শহরে এত মানুষ থাকে কেন? সেটার উত্তরে প্রথমেই আসে কর্ম কিংবা পেটের দায়ের কথা। শুধু ঢাকাকেই কেন্দ্রীয় করণের মাধ্যমে আমরা দেশে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছি যেখানে কোন কিছু করতে গেলে এখন ঢাকা মুখী হতে হয়।

বরিশালের একজন মানুষ যেকিনা ঢাকাতে পঞ্চাশ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করে তাকে যদি বরিশালে অন্তত বিশ হাজার টাকার ঐ যোগ্যতার ও সম্মানের চাকরি দেয়া হয় সে কিন্তু বরিশালেই থেকে যাবে। কিন্তু আমরা সেটা তাদের দিতে পারছি না। অন্যদিকে শুধু ঢাকার আধুনিকায়নের দিকে বেশি নজর দেওয়া বলুন কিংবা অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলো সম্পর্কে না ভাবার ফসল বলুন সমস্ত বেসরকারী ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যক্রম কিন্তু ঢাকাতে বসেই পরিচালিত হয়। ঢাকার পার্শ্ববর্তী শহর কিংবা দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে যদি আধুনিক যাতায়াত ব্যাবস্তা, সঠিক নিরাপত্তা ব্যাবস্থা এবং সর্বোপরি ঢাকার বাইরে কর্মক্ষেত্র সৃষ্টিতে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার নীতি গ্রহণ করা হতো তবে এতবেশী লোক কখনোই ঢাকাতে থাকতো না। এই উত্তর থেকেই কিন্তু আমরা ধীরে ধীরে ঢাকার অতিরিক্ত জনসংখ্যা সমস্যার সমাধানের দিকে যেতে পারি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় যেকোনো কাজের সর্বশেষ কিংবা সর্বোচ্চ সফলতার জন্য এদেশের একজন নাগরিককে ঢাকামুখি হতে হচ্ছে। যার দরুন সৃষ্ট চাপ বিভিন্ন সমস্যায় ভাগ হয়ে ঢাকার জনজীবনে আনছে অস্বস্তি ও নিরাপত্তাহীনতা।

এই চাপ মোকাবেলায় সরকারি দপ্তর বাদে অন্যান্য দপ্তরগুলোর ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত হতে পারে অদ্ভুত কিন্তু কার্যকরী। অন্যদিকে ঢাকার বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গুলো একটু দূরে সরিয়ে নেবার ব্যাপারে শিল্পমালিকদের কার্যকর প্রণোদনা এবং আর্থিক সুযোগ সুবিধা প্রদান হতে পারে নিরাপদ ঢাকা বিনির্মানের অন্যতম পদক্ষেপ। তবে এগুলোর জন্য নিঃসন্দেহে সময় লাগবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মৃত্যুর মিছিল থামাতে ও ঢাকাকে কিছুটা নিরাপদ ও বাসযোগ্য করতে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। অবৈধ দালান চিহ্নিতকরণ এবং সেগুলোর ব্যাপারে দ্রুত ব্যাবস্থা গ্রহণ, গণপরিবহনের আধুনিকায়ন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগ উন্নত করা, শহরের যেকোনো জায়গায় আগুন লাগলে যেন দ্রুত পানি পাওয়া যায় সে ব্যাবস্থা নিশ্চিত করা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং মাদক মুক্ত শহর বিনির্মান, গণপরিবহনের চালকদের ব্যাপারে সরকারি নিয়ন্ত্রণ সংস্থা গুলোর বিশেষ নজর দেওয়া ইত্যাদি এখন সময়ের দাবী যেগুলো থেকে পিছপা হবার সুযোগ নেই।

এছাড়া মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকার দূষণ নিশ্চিহ্ন করে সবুজায়ন করার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। বিশেষ করে সরকারকে একটি কথা মনে না রাখলেই নয় যে শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখিয়ে সামনের দিনগুলোতে ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না, মানুষ এখন দেশের আধুনিকায়নের সাথে সাথে জীবনমানের উন্নয়নের ব্যাপারে সম্পূর্ণ সজাগ। আর ঢাকা শহরের মানুষদের জীবনমানের উন্নয়নের প্রথম ধাপ হচ্ছে নিরাপদ ও সহজ জীবনযাপন নিশ্চিত করা, যেটার ব্যাপারে আর বিন্দুমাত্র উদাসীনতা আরো বড় বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াবে।

লেখকঃ শফিক মুন্সি, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র আন্দোলন কর্মী।

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net