তিনি ছিলেন এই বিশ্বের অন্যতম মহাতারকা বিজ্ঞানী। ২২ বত্সর বয়স হইতে ৭৬ বত্সর অবধি তাহার বাঁচিয়া থাকাটাই ছিল এক বিস্ময়। তিনি কেবল বাঁচিয়াই থাকেন নাই, আইজ্যাক নিউটন বা আইনস্টাইনের পর আধুনিক বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ‘জিনিয়াস’ হিসাবে আখ্যায়িত হইয়াছেন। ২২ বত্সর বয়সে দুরারোগ্য মোটর নিউরোন ডিজিজে আক্রান্ত হইবার পর চিকিত্সকরা যখন তাহার মৃত্যুর প্রহর গুনিতেছিলেন, বলিয়াছিলেন, তাহার আয়ু মাত্র আর দুই বত্সরের অধিক নহে; সেই তিনি বহাল তবিয়তে বাঁচিয়া রহিলেন আরো ৫৪টি বত্সর। বিশ্বকে উপহার দিলেন একের পর এক বিস্ময়কর তত্ত্ব। অবশেষে গতকাল বুধবার ভোররাতে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে, নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিলেন মহাবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং।
ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর ও আপেক্ষিকতা লইয়া গবেষণার জন্য তিনি বিখ্যাত হইলেও সাধারণ পর্যায়ে তিনি তারকাখ্যাতি পান তাহার রচিত ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ গ্রন্থটির মাধ্যমে। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত এই বইটি সারা বিশ্বের সাধারণ বিজ্ঞান পাঠকদের মধ্যে সৃষ্টি করে বিপুল আলোড়ন। এইক্ষেত্রে তিনি যাহা করিয়াছেন, তাহার মূল্য অপরিসীম—তিনি বিশ্বের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের মনে বিজ্ঞানের প্রতি এক ধরনের বিস্ময়কর ভালোবাসা সৃষ্টি করিতে পারিয়াছিলেন। বিশ্বখ্যাত তাত্ত্বিক বিজ্ঞানী হইয়াও তিনি কেন নোবেল পুরস্কার পান নাই, তাহা লইয়া অনেকের মনে প্রশ্ন রহিয়াছে। তবে এইক্ষেত্রে উত্তরটি সহজ। তিনি যখন ব্ল্যাক হোলস আর মর্টাল থিওরি প্রদান করেন, তখন তাহার সত্যতা প্রমাণ করিবার কোনো উপায় ছিল না। ভিনগ্রহবাসীদের লইয়া গবেষণা করিয়া তিনি বরাবরই বলিয়াছেন, ভিনগ্রহবাসীরা যদি আমাদের চাইতে প্রযুক্তিতে অগ্রগামী হয়, যাহার সম্ভাবনা প্রবল, তবে মানুষের জন্য তাহা হইবে ঘোরতর বিপদের। কারণ, ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াদের আমরা যে দৃষ্টিতে দেখি এলিয়েনরাও আমাদের সেই দৃষ্টিতে দেখিতে পারে। তিনি মনে করেন, পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হইয়া উঠিতেছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, পরমাণু যুদ্ধ বা জিনগত প্রকৌশলের মাধ্যমে সৃষ্ট ভাইরাস বা অন্য যেকোনো ভয়ানক কোনো বিপদে এখানে নিঃশেষ হইয়া যাইতে পারে প্রাণের অস্তিত্ব। সুতরাং মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় মহাবিশ্বে নূতন বাসস্থানের সন্ধান করা কর্তব্য।
গতকাল ১৪ মার্চ ছিল অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের জন্মদিন আর এইদিনেই মহাপ্রয়াণ ঘটিল স্টিফেন হকিংয়ের। মজার ব্যাপার হইল, ১৬৪২ সালের ৮ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করিয়াছিলেন বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ গ্যালিলিও গ্যালিলি। আর তাহার ঠিক তিন শত বত্সর পর ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন আধুনিককালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই বিজ্ঞানী। জীবনের প্রতি ছিল তাহার গভীরতম ভালোবাসা। কোনো প্রতিকূলতাই তাহাকে নিরস্ত করিতে পারে নাই। প্রয়াণ তো ঘটিবেই কোনো একটি সময়, কিন্তু মানুষের প্রতি তাহার ভালোবাসা এবং তাহার প্রতি মানুষের ভালোবাসার যেন শেষ নাই। ইহা টিকিয়া রহিবে ততকাল, যতকাল রহিবে মানুষের অস্তিত্ব। হকিংয়ের প্রতি রইল আমাদের অনিঃশেষ ভালোবাসা।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply