গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকাল হইতে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুর চালায় ছাত্রলীগের একাংশ। ইত্তেফাকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষাসহ শাটল ট্রেন ও শিক্ষক বাস চলাচল বন্ধ করিয়া দেয়। এই সময় সাংবাদিকদের দুইটি গাড়ি ও শিক্ষকদের ১৪টি বাসে ভাঙচুর চালানো হয়। প্রক্টর অফিস, কলা অনুষদের ডিনের অফিসসহ ভাঙচুর করা হয় ১২টি কক্ষ। ইহাতে সারা ক্যাম্পাস জুড়িয়া আতঙ্ক ছড়াইয়া পড়ে। হলে পুলিশের তল্লাশি ও কয়েকজনকে আটকের প্রতিবাদে প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রলীগ অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের অবরোধ প্রত্যাহার করা হইয়াছে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা হওয়ায় আটককৃত কয়েকজন কর্মীকে মুক্তিও দেওয়া হইয়াছে।
উপর্যুক্ত ঘটনায় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি প্রশংসনীয়। তবে ছাত্রলীগের নামে যেভাবে শিক্ষক ও সাংবাদিকদের গাড়ি এবং বিশ্ববিদ্যালয় অফিস ও শিক্ষার্থীদের যানবাহনে হামলা চালাইয়াছে, তাহা অবশ্যই ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয়। কোনো কোনো সূত্রমতে, কর্মচারী নিয়োগে ছাত্রনেতাদের সুপারিশ না মানায় মঙ্গলবারের পূর্ব নির্ধারিত সিন্ডিকেট সভাকে টার্গেট করিয়া ধর্মঘট ডাকা হয়। প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করাই ছিল ইহার মূল উদ্দেশ্য। অতীতেও বিভিন্ন সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের এইরকম তদবিরবাজি ও টেন্ডারবাজি ইত্যাদিতে জড়িত হইবার দৃষ্টান্ত আছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে শিক্ষার্থীদের হলগুলিতে তল্লাশি চালাইতে পারেন। এই সময় যাহাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড পাওয়া যাইবে না, তাহাদের পুলিশের হস্তে সমর্পণও করিতে পারেন। কিন্তু ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্য ইহা কোনো অজুহাত হইতে পারে না। এদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানাইয়াছে, চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহন ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ ভাঙচুরের ঘটনায় এই সংগঠনের কেহ জড়িত নহে। কারণ সেখানে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নাই, নাই কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমও। সুতরাং যাহারা ধর্মঘটের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করিয়াছে তাহাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে অসুবিধা কোথায়?
চট্টগ্রামের এই ঘটনার পর ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করিয়া ছাত্রলীগের তিন গ্রুপের মধ্যে মারামারি হইয়াছে বলিয়া ইত্তেফাকে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে গতকাল। এই ঘটনাটিও নিন্দনীয়। এক্ষেত্রেও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি জানাইয়াছেন যে, বেনামি সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারি হইয়াছে। ছাত্রলীগের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারাও এই ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটিতে পারে। এই ব্যাপারে সতর্ক থাকাটাই কি কাম্য নহে? বিশেষ করিয়া প্রধানমন্ত্রী যখন দেশ ও জনগণের উন্নয়নে নিরন্তর পরিশ্রম করিয়া যাইতেছেন, যখন আরেকটি সাধারণ নির্বাচন দ্বারে কড়া নাড়িতেছে, তখন সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন যেকোনো পদক্ষেপেই সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের কঠোর নজরদারির দাবি রাখে বৈকি। ছাত্রলীগের নামে যাহা হইতেছে তাহা কঠোর হস্তে দমন করিতে না পারিলে সরকারের বহু গুরুত্বপূর্ণ অর্জনও যে ম্লান হইয়া যাইতে পারে—তাহা বলার অপেক্ষা রাখে না।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply