শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৬:০৭

বরিশালে আ.লীগের ভয় জনতার মনোনীত প্রার্থী!

dynamic-sidebar

এইচ আর হীরা ॥ দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। কিন্তু ভোট নিয়ে নির্ভার হতে পারছে না খোদ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা। দলের মধ্যে দৃশ্যমান বিরোধ না থাকলেও দলীয় অন্তঃকোন্দলের প্রভাব ভোটে পড়ে কি-না এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় নৌকার প্রার্থীরা। দলের হাইকমান্ড থেকে একাধিকবার কঠোর নির্দেশনার পরও থেমে নেই বিদ্রোহী প্রার্থীরা। প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় ধাপেও অধিকাংশ ইউপিতেই মাঠে রয়েছেন দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীরা (বিদ্রোহী)।

তবে এবার আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থীরা নিজেদের বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন না করলেও জনতার মনোনীত প্রার্থী হিসেবেই নিজদের পরিচয় দিয়ে থাকেন। এতে ক্রমশ:ই তৃণমূলে প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা একে অন্যের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন স্থানে ঘটছে হতাহতের ঘটনাও। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে সহিংসতা তত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে দলের হাইকমান্ডের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বরিশাল সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে বিদ্রোহী সাতজন প্রার্থীকে বহিস্কার করেছে আওয়ামী লীগ।

 

শুক্রবার (৫নভেম্বর) সকালে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিম রেজা মোফাজ্জেল স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। স্বাক্ষরিত বহিস্কারাদেশ সূত্রে জানা গেছে, দলীয় সভাপতির নির্দেশ অমান্য করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিপক্ষে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় সাতজনকে বহিস্কার করা হয়েছে। বহিস্কৃতরা হলেন-রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের মোঃ হাবিবুর রহমান খোকন ও মিজানুর রহমান জাকির, শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের রুবেল হোসেন মামুন, চরমোনাই ইউনিয়নের গিয়াস উদ্দিন হাওলাদার, চরকাউয়া ইউনিয়নের সুলতান আহমেদ খান ও মোঃ হারুন-অর রশিদ এবং চাঁনপুরা ইউনিয়নের মোঃ জাহিদ হোসেন। অপরদিকে বিদ্রোহী প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলছেন, স্থানীয় রাজনীতিতে গ্রুপিং এবং কেন্দ্রে নাম পাঠানোর সময় স্বজনপ্রীতি ও মনোনয়ন বাণিজ্যসহ নানা কারণে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। এ কারণে নিজেদের ‘অধিক জনপ্রিয়’ দাবি করে মাঠ ছাড়ছেন না তারা। ফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছেন নিজ দলের বিদ্রোহীরাই। নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের লক্ষ্যে তারা নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন বলে জানান একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। আগামী ১১ নভেম্বরকে সামনে রেখে বরিশাল সদর উপজেলায় চলছে এখন ভোটের আমেজ। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে উপজেলার সড়ক ও অলিগলি। নানা রঙে-ঢঙে চলছে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে প্রচার প্রচারণা।

গতকাল (৫নভেম্বর) শুক্রবার তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে দেখা যায়, সদর উপজেলার রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী আহমেদ শাহরিয়ার বাবুর পক্ষে ২নং কাশিপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কামাল হোসেন লিটন মোল্লা নৌকার প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। অপরদিকে রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হাবিবুর রহমান খোকন বিভিন্ন এলাকায় বিরামহীনভাবে গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেছেন। এমনকি নিজের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে ভোট ও দোয়া চেয়েছেন ভোটারদের কাছে। দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৩০জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এর মধ্যে পাঁচটিতেই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন ছয় ইউনিয়নেই প্রার্থী (হাতপাখা) দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও তিনটি ইউনিয়নে দলটির নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আহমেদ শাহরিয়ার বাবু। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্থানীয় এমপি সমর্থক হাবিবুর রহমান খোকন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী কোতোয়ালি থানা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের ছোট ভাই মো. মনিরুজ্জামান মনির।

 

চরকাউয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হারুন অর রশিদ। আর নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি। স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মামুন সরদার। চাদপুরা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হেলাল উদ্দিন। আর বিদ্রোহী প্রার্থী সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক এইচএম জাহিদ। শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান মুন্না নৌকার প্রার্থী। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রুবেল হোসেন তালুকদার। এখানে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। চন্দ্রমোহন ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি এসএম মতিউর রহমান। স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি সমর্থক সিরাজুল ইসলাম। চরমোনাই ইউনিয়নে প্রার্থী চরমোনাইয়ের পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমিরের ছোট ভাই সৈয়দ জিয়াউল করীম। এখানে নৌকার প্রার্থী মাস্টার নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দলটির ইউনিয়ন যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন।

এব্যাপারে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যহারকালে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছিল। অনেক ইউনিয়নের প্রার্থীরা প্রত্যাহার করেছেন আবার অনেকে করেননি। তবে দলের সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ উপেক্ষা করে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নৌকার বিরোধীরা করে তারা কখনো আওয়ামী লীগের হতে পারে না। একারণেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বরিশালের ৭ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

 

এদিকে গত বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার সকল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হবে শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, যদি কোন দুষ্কৃতিকারী নির্বাচনের আগে কিংবা পরে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটানোর চেষ্টা করে, নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, তবে তার যত রং বেরংয়ের পরিচয়ই থাকুক না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা হবে। বরিশাল সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ নুরুল আলম জানান, ভোট নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কমিশন কাজ করছে। ইতিপূর্বে সব প্রার্থীকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা মেনে ভোটের মাঠে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net