মঙ্গলবার, ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১:৩৫

আধুনিক বরিশালের রূপকার শওকত হিরনের ৬৫তম জন্মবার্ষিকী আজ

আধুনিক বরিশালের রূপকার শওকত হিরনের ৬৫তম জন্মবার্ষিকী আজ

dynamic-sidebar

অতিথি প্রতিবেদক : বরিশাল বাসী’র প্রতিটা মূহুর্তে গভীর ভাবে শ্রদ্ধায় স্মরন করা জনীতিবিদ,সাবেক সিটি মেয়র ও সংসদ সদস্য উন্নয়নের রুপকার শান্তির নগরী গড়া প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের জন্মবার্ষিকী আজ ১৫ই অক্টোবর রবিবার। তার জন্মদিন উপলক্ষে নগর আ’লীগের অঙ্গসংগঠনের তার অনুসারী নেতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন মসজিদ,মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থানে তার রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করেছে।ব্যক্তি হিরনের পরিবার ও অনুসারী ভক্তরা আজ তার কবর জিয়ারতের মধ্যদিয়ে জন্মবার্ষিকী’র দিনে শভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবে বলে জানা গেছে। বিএম কলেজ ছাত্র কর্মপরিষদ (বাকসু) ভিপি মো:মঈন তুষার তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করেছেন বলে জানা গেছে।এদিকে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো: জসিম উদ্দীনের উদ্যোগে দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।

ব্যক্তি হিরনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে অধিকাংশ নগরবাসী ও অনুসারীরা বিভিন্ন স্থানে গভীর শ্রদ্ধার সাথে তাকে স্মরন করে দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে। প্রয়াত হিরনের নগর উন্নয়ন স্থবির হয়ে ধ্বংষের ছাপে ভোগান্তি আর জনদুর্ভোগে তার শূণ্যতা অনুভব করছে প্রতিটা মুহুর্তে নগরজীবনে বলেও জানায় ভূক্তভোগী অধিকাংশরাই।

নিম্নে শওকত হোসেন হিরণ এর জীবনি দেয়া হলো:
জন্ম ও শিক্ষাঃ
বরিশাল নগরীর আলেকান্দায় মামার বাড়িতে ১৯৫৬ সালের ১৫ অক্টোবর শওকত হোসেন হিরণ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কালীশুরি ইউনিয়নের আড়াইনাও গ্রাম। তাঁর পিতা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর আব্দুল হাসেম সরদার এবং মাতা গৃহিনী জয়নব বেগম। চার পুত্র ও ছয় কন্যার মধ্যে তিনি তৃতীয়। শৈশব থেকে শুরু করে তার সারাজীবন কেটেছে আলেকান্দায়। তিনি বরিশাল নগরির নুরিয়া হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাস করেন। এরপর বিএম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং স্নাতক পাস করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বরিশাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করেন।

ব্যক্তি ও কর্মজীবনঃ
হিরণের স্ত্রী বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। মৃত্যুর কিছুদিন আগে সুইডেনে পড়াশোনারত মেয়ে রোশনী হোসেন তৃণার বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ছোট ছেলে সাজিদ হোসেন রাফসান ব্যারিষ্টারীতে আধ্যায়নরত। সাজিদ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য। হিরনের পরিবার নগরীর রিফুজী কলোনী এলাকার ‘হিরন পয়েন্ট’ নামের বাসায় বসবাস করেন।
শওকত হোসেন হিরণ পেশায় ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী। তিনি ১১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন।

রাজনৈতিক জীবনঃ
বরিশাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করার পরে তিনি যোগ দেন জাসদ ছাত্রলীগে। তারপর ১৯৭৯ সালে বিএনপির ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি যোগ দেন এরশাদের জাতীয় পার্টিতে। ১৯৮৮ সালে ২২ বছর বয়সে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে বরিশাল সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য পদের নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ঐবছর অপর একটি উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছিলেন হিরন। ১৯৯৭ সালে ঐকমত্যের সরকারের শরীক দল জাতীয় পার্টির মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। ফলে তিনি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপি’র বরিশাল বিভাগের নেতৃত্বে আসেন।

১৯৯৬ সালে তৎকালীন চীফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর হাত ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মাধ্যমে হিরণ যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সদর আসনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন তিনি এবং তা সক্রিয়ভাবে রাজপথে থেকে করেন। তাই যোগ্যতা বিবেচনা করে ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁকে মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনোনীত করে। সাংগঠনিক দক্ষতা ও শক্তিশালী নেতৃত্ব দিয়ে তিনি মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড এবং সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নকে নতুন করে সাজান। ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয় অর্জন করেন এবং মেয়র নির্বাচিত হন।

হিরণ তাঁর নিজের কার্যক্ষমতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে টানা ৩৫ বছর পর বরিশাল নগর ভবনের নেতৃত্বে নিয়ে যান। ২০১৩ সালের ১৫ জুন বিসিসি’র নির্বাচনে তিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের কাছে পরাজিত হন। এরপর ২০১২ সালের সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বরিশাল সদর আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মৃত্যুঃ
২০১৪ সালের ২২ মার্চ, শনিবার রাত ১০টায় হিরণের বরিশাল ক্লাবের সামনে ব্রেন স্ট্রোক হয়। এর সাথে সাথেই তিনি পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান এবং চেতনা হারিয়ে পড়েন। সাথে সাথেই তাঁকে শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে নিয়ে যান। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই রোববার তাঁর মস্তিষ্কে ‘ডিকমপ্রেসিভ ক্রানেকটমি’ নামে একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপরে মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই অনুযায়ী সোমবার রাতে হিরণকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের গ্লেনঈগলস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরবর্তীতে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মঙ্গলবার সকালে তার একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা হিরণের বাঁচার সব আশা ছেড়ে দেয় এবং বাংলাদেশে এনে লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার পরামর্শ দেয়। পরবর্তী বৃহস্পতিবার রাতে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনরায় অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থায় রাখা হয়। অবশেষে ৯ই এপ্রিল, ২০১৪; বুধবার সকাল সাতটায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর সাথে সাথে নগর উন্নয়ন আর সাংগঠনিক কার্যক্রমেরও মৃত্যু হয়েছে বলেও জানায় বরিশালের অধিকাংশ ব্যক্তি হিরনের অনুসারীরা।

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net