শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ২:১৬

শিরোনাম :
রেমিটেন্স আহরণে রূপালী ব্যাংকের ২ দিন ব্যাপী ক্যাম্পেইন সম্পন্ন সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা বরিশালের দুই উপজেলায় বৈধতা পেলেন ২৫ প্রার্থী ঝালকাঠিতে বেপরোয়া ট্রাক কেড়ে নিল ১৪ প্রাণ বরিশাল সদরে ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাদিস মীরের মনোনয়ন দাখিল বরিশালে তীব্র গরমে নাভিশ্বাস জনজীবন,বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ! বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জসিম উদ্দিনের মনোনয়নপত্র দাখিল বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এসএম জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র দাখিল দুই উৎসবের ছুটি শেষে বরিশাল থেকে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ ঈদ আনন্দ থাকতেই বরিশালে বইছে পহেলা বৈশাখের আনন্দ

শেবাচিম হাসপাতালের কার্ডিওলোজি বিভেগের বেহাল দশা

dynamic-sidebar

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ। বেলা সাড়ে ১১টায় এই বিভাগের একটি কক্ষে ঘটা করে পালিত হচ্ছিল বিশ্ব হার্ট দিবস। এবারের শ্লোগান ‘হৃদয় দিয়ে হোক হৃদরোগের প্রতিরোধ।’ ভেতরে যখন উৎসব সেই কক্ষের বাইরে তখন কাঁদছিলেন মোসাম্মৎ রাণী। পোস্ট সিসিইউতে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে ভর্তি তার পিতা আব্দুল খালেক। বরিশাল জেলার বাবুবগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাপশা ইউনিয়ন থেকে এসেছেন তারা।পরিবারের মধ্যে মোসাম্মৎ রাণী সবার বড়। আয়ের মাধ্যম ছিল তার পিতা। হাসপাতালের চিকিৎসক বলেছেন, হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে এবং ফুসফুসে পানি জমেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিতে হবে। রাণীকে চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছে দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার জন্য।

কারন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার মত ব্যবস্থা এই হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের নেই। অথচ পরিবারের সামর্থ না থাকায় ঢাকা নিতে পারছেন না রাণী। ফলে সরকারি হাসপাতালে এসেও উন্নত চিকিৎসা পাননি তিনি।রাণী বলেন, এই হাসপাতালে চিকিৎসা না পেলে হয়তো আব্বা মারা যাবেন। তারপর তার লাশটি নিয়ে যেতে হবে বাড়িতে। বর্তমানে পিতাকে বাঁচাতে হাসপাতালের অন্যন্য রোগীর স্বজনদের হাতে-পায়ে ধরে সাহায্য চাইছেন।আরেক রোগী ওয়াহেদ সকালে এসেছেন একজন চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও দেখা করতে পারছিলেন না। তিনি জানান ক্ষোভের কথা। ওয়াহেদ বলেন, দিবস এলে নামকায়স্থ হার্ট দিবস পালন করা হয়। অথচ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বরিশাল বিভাগের রোগীদের হৃদরোগ চিকিৎসার একমাত্র হাসপাতাল। এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই হাসপাতালে একটি এনজিওগ্রামের মেশিন আনা হয়েছিল। ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র, সিন্ডিকেটের কারনে মেশিনটি নষ্ট করে রাখা হয়েছে। যাতে চিকিৎসা ব্যহত হয়, মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে সরকারি ডাক্তারদের বেসরকারিভাবে চিকিৎসা নেন।সাবেক এই ব্যংক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দাবী এই হাসপাতালের সিসিইউ, কার্ডিয়াক সেকশন রোগীর চিকিৎসার জন্য পরিপূর্ণ করা হোক। চিকিৎসা না নিয়ে যেন ফেরত যেতে না হয়।

 

স্বাস্থ্য বিভাগের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি আর অদক্ষতারতো আর সীমা নেই। আমি মনে করি ফাটাকেস্টোর মত দুর্নীতি দমনে কাজ করে রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত উচিত। নয়তো এইসব হার্ট দিবস লোক দেখানো ছাড়া আর কিছু না।শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্তদের বড় ধরনের চিকিৎসা সেবা দেওয়া যায় না অপ্রতুলতার কারনে বলে স্বীকারও করেছেন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ জাকির হোসেন। তিনি বলেন, কার্ডিলজি বিভাগে মোট শয্যা সংখ্যা ১০টি। কিন্তু এখানে প্রতিদিন ৬৫ জনের ওপর রোগী ভর্তি হন। ফলে হিমশিম খেতে হয় রোগীর চিকিৎসায়।ডাঃ মোঃ জাকির হোসেন বলেন, কার্ডিওলজি বিভাগে অনেক কিছুই নেই যা একজন রোগী বাঁচাতে অত্যান্ত গুরুত্বপূণ। এরমধ্যে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ নেই। এটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি আমাদের থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে চালু করা যাচ্ছে না। শিশু হৃদরোগ কিন্তু একটি আলাদা বিভাগ। তা নেই আমাদের হাসপাতালে। হার্ট ফেইলের ইউনিট করা দরকার। কারন এখন যারা হৃদরোগে আক্রান্ত তাদেরমধ্যের বিশাল একটি অংশ হার্ট ফেইল করেন। তাছাড়া সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে অনেক মা হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ইউনিট দরকার।এই চিকিৎসক বলেন, অনেক অভাব থাকলেও হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক, নার্স সবাই মিলে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।দক্ষিণাঞ্চলে হৃদরোগীর পরিসংখ্যান বিভাগীয় স্বাস্থ অধিদফতরের কাছে না থাকলেও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জানা গেলো বিগত কয়েক বছরে কতজন চিকিৎসা নিতে এসে ভর্তি হয়েছেন।

২০১৮ সালে কার্ডিওলজী বিভাগের সিসিইউতে ভর্তি হন ৭৮৪৭ জন। এই রোগীর মধ্য থেকে ৬৫৭৬ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, ৭৩৭ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র রেফার্ড করা হয়েছে। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ৫৩৪ জন। গড় হিসেবে সুস্থ হন ৮৩ দশমিক ৮০ শতাংশ, রেফার্ড করা হয় ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং মৃত্যুবরণ করেন ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।২০১৯ সালে রোগী ভর্তি হন ৮ হাজার ৪২১ জন। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৭৭৪ জন। উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে ৯৬১ জন এবং মারা যান ৬৮৬ জন।২০২০ সালে কার্ডিওলজী বিভাগে মোট চিকিৎসা নেন ৬ হাজার ৮৩৩ জন। এরমধ্যে থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র রেফার্ড করা হয় ২৪১ জন, মৃত্যুবরণ করেন ৬৪৩ জন এবং সুস্থ হন ৫ হাজার ৯৪৯ জন।সর্বশেষ ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৬ হাজার ৭১৮ জন। এরমধ্যে ৬৬৮ জন মৃত্যুবরণ করেন। দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

এই অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসতে হলে ব্যাক্তি সচেতনতা যেমন বৃদ্ধি করতে হবে তেমনি সুচিকিৎসার ওপর জোর দিতে হবে।বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ বাসুদেব কুমার দাস বলেন, হৃদরোগের অন্যতম কারন আমাদের খাদ্যাভাস, বদঅভ্যাস এবং জীবনযাপনের ধরণ। হার্ট ভালো রাখতে চর্বিযুক্ত, মিষ্টিজাতীয় খাবার অবশ্যই পরিহার করতে হবে। বিশেষ করে ছেলেমেয়েদের ফাস্টফুডের দিকে বেশি ঝোক। ফাস্ট ফুড অবশ্যই পরিহার করতে হবে। এতে হার্ট নষ্ট হয়।স্বাস্থ্য পরিচালক বলেন, বদঅভ্যাসের মধ্যে তামাক জাতীয়, অ্যালকোহল অবশ্যই পরিহার করতে হবে। এছাড়া জীবন যাপনের ক্ষেত্রে এখন বৈশ্বিক মহামারি চলছে। এই অবস্থায় অনেকেই বাসায় বসে থাকেন। এতে হার্টের ক্ষতি হয়। আপনাকে অবশ্যই নিয়ম তান্ত্রিকতার মধ্যে প্রতিদিন অন্তত দুইবেলা ৩০ মিনিট করে হাটতে হবে।ডাঃ বাসুদেব কুমার দাস বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগ চলু রয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে হার্ট ফাউন্ডেশন কাজ করছে। আমরা চেষ্টা করছি, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেসব চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই, যার কারনে রোগীদের ঢাকামুখি হতে হয় সেই সরঞ্জামগুলো এনে চালু করে হাসপাতালটির কার্ডিওলজি বিভাগের সক্ষমতা বাড়ানোর।

 

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net