এইচ আর হীরা ॥ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে চলছে ৮ দিনের সরকারঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউন। সর্বাত্মক লকডাউনের চতুর্থ দিন আজ শনিবার। সকাল ৮টায় বরিশাল নগরের পথঘাট ফাঁকা। কেবল সড়কের মোড়ে মাড়ে পুলিশের সদস্য ছাড়া তেমন লোকজনের চলাচল নেই।
লকডাউনের চতুর্থ দিন। রাস্তা জনমানবশূন্য। চকবাজার এলাকা, বরিশাল নগর,
দু-একটি রিকশা, তিন চাকার যান ও মোটরসাইকেল ছাড়া আর কোনো যানবাহনও নেই।নগরের গুরুত্বপূর্ণ বটতলা মোড়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন যান থামিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছেন বা যাত্রীদের গন্তব্য জানছেন। যাত্রীর অজুহাতে সন্তুষ্ট হলে যান ছেড়ে দিচ্ছেন, নয়তো আটকে দিচ্ছেন। এই তল্লাশিচৌকি পার হয়ে নগরের বটতলা বাজারে গিয়ে দেখা গেল সুনসান নীরবতা। বাজারে সবজি, ডিম, মাছ, মুরগি সবই আছে।
কিন্তু ক্রেতা নেই।জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঘরের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন ও অফিসও। তবে নির্দেশনা উপেক্ষা করে কারণে-অকারণে মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছেন। অনেকে আবার পুলিশি ঝামেলা এড়াতে কেনাকাটা না করলেও বাজারের ব্যাগ সঙ্গে রাখছেন। মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব ছাড়াই ভিড় করে রাস্তায় আড্ডা ও ঘোরাফেরা করছে মানুষ।শনিবার (১৭ এপ্রিল) বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ। খুব বেশি মানুষের জটলা দেখা না গেলেও পাড়া-মহল্লায় অবাধে চলছে যানবাহন। পাড়া-মহল্লায় সব ধরনের দোকান-পাট খোলা। অবাধে চলাচল করছেন মানুষ। দুপুর গড়ালেই অলি-গলিগুলো হয়ে উঠছে ভরা হাটবাজার। শুধু মানুষ আর মানুষ।এমনকি এই রমজানে পরন্ত বিকেলে একটু স্বস্তি পাওয়ার লক্ষে এলাকার মাঠে আয়োজন হয় ক্রিকেট খেলার।
পাড়া-মহল্লায় ক্রিকেট খেলার আয়োজন
পলাশপুর,কেডিসি,কাশিপুর,নথুল্লাবাদ এলাকার বিভিন্ন গলি ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও স্বাস্থবিধির বালাই নেই। যে যার যার মতো অবাধে চলাফেরা করছেন। মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্ব নেই। গলিগুলোতে অবাধে চলাচল করছে মানুষজন। জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন পাড়ার তরুণ, যুবক ও বয়স্করাও। শাকিল,সজল ও মিশু জিয়া সড়ক এলাকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তারা জানান, সারাদিন বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগে না বলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে ক্ষণিকের জন্য বাইরে বের হয়েছেন।লকডাউনের কারণে কাজের চাপ নেই। বিকেল পর্যন্ত সবাই একসঙ্গে ঘুরবেন। সন্ধ্যায় ইফতারের আগে বাসায় ফিরবেন।
মুখে মাস্ক না পরেই রাস্তায় ফল বিক্রি করছিলেন শাজাহান। তিনি বলেন, ‘মাস্ক পইরা কি হইব? করোনা হওয়ার থাকলে এমনিতেই হইবে। আল্লাহ যেদিন নিবে, হেইদিন চইলা যাইতে হইব। এসব সামজিক দূরত্ব দিয়া কিছু হইবে না। মাসুদ নামের এক যুবক মাস্ক পরেই বের হয়েছেন। তবে তার সংশয় তিনি একা স্বাস্থবিধি মেনে কি করবেন? তিনি বলেন, ‘আশপাশে কেউই তো মানছে না। সবাই মিলে সচেতন না হলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসবে না। কাজে বের হয়েছি। কিন্তু রাস্তায় দেখি মানুষ আর মানুষ। একটা জিনিস কিনতে গেলে আরও তিনজন এসে গায়ে পড়ে। এ অবস্থায় কিভাবে স্বাস্থবিধি মেনে চলব?’ থুতনির নিচে মাস্ক পরা মাছ বিক্রেতা সত্তার বলেন, ‘মানুষকে ভিড় করতে নিষেধ করলেও শুনে না। বিশেষ করে বিকেল বেলায় আমাদের বাজারে প্রচন্ড ভিড় বেড়ে যায়। মানুষের মাথা মানুষ খায়— এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। কারণ ইফতারের আগ মুহূর্তে সবাই একযোগে বাজার ও কেনাকাটা করতে বের হন। সবাই নিজের জায়গা থেকে সচেতন না হলে কেউ একা করোনা ঠেকাতে পারবে না।
যতই সরকার লকডাউন দিক না কেন।এদিকে লকডাউনের প্রথম দিনেই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বরিশাল মেট্রপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সাধারন জনগনকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহায়তা করার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন।
অলি-গলিতে মানুষের জটলা সম্পর্কে জানতে চাইলে কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচারজ মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, ’বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মাননীয় বিএমপি কমিশনার জনাব মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বিপিএম-বার মহাদয়ের নির্দেশে আমরা সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কাঁচাবাজারের জিনিসপত্র বিক্রির নির্দেশনা আছে। এ সময় কিছুটা মানুষের উপস্থিতি দেখা যেতে পারে। তবুও যাতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত না হয়, সে ব্যাপারে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। সবসময় মাইকিংসহ চেকপোস্ট বসিয়ে টহল দেয়া হচ্ছে।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply