রিয়াজ আকনঃ দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলা ছাত্রলীগ। বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের পাশাপাশি ভিন্নমতের ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া একশ্রেণীর নেতাকর্মীর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অপহরণ, ধর্ষণ, প্রশ্নফাঁসসহ নানা কার্যকলাপের কারণে নিয়মিতই আলোচনায় থাকছে ছাত্রলীগ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নেয়ায় এ ধরনের ঘটনার পুুনরাবৃত্তি হচ্ছে এখনই লাগাম টেনে না ধরলে ভভিষ্যতে সংগঠনটির এমন নেতিবাচক কর্মকান্ডে সরকারের উপর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা। সর্বশেষ গত ১৬ নভেম্বর বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক কাজী মুরাদ এক কুয়েত প্রবাসীর স্ত্রী
এবং তার কাছে প্রবাসীর গচ্ছিত প্রায় ২০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছেন।
একই সংগঠনের সভাপতি জোবায়ের আহমেদ জুয়েলের বির“দ্ধে এক কাঠ ব্যবসায়ীকে জিন্মি করে চাঁদাবাজীর ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদ মাহমুদের বিরুদ্ধে ২২ লাখ টাকার চেক প্রতারনার মামলা হয়েছে আদালতে।৩ শীর্ষ নেতার অপকর্মে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে মুলাদী উপজেলা ছাত্রলীগ। এ বিষয়ে যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের নেতারা।
গত ৩ ডিসেম্বর বরিশাল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে কুয়েত প্রবাসী মোতালেব কাজীর বাবা আবুল হাসেম কাজী অভিযোগ করেন, গত ১৬ নভেম্বর কুয়েত থেকে মোতালেবের স্ত্রী আসমা খানম লাকিকে নিয়ে প্রবাসীর পাঠানো ২০ লাখ টাকা ও ৪ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্নালংকার এবং তার দুই সন্তান নিয়ে পালিয়ে যায় উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক মুরাদ কাজী।এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলেও ক্ষতিগ্রস্থ আবুল হাসেম কাজীর মামলা নেয়নি পুলিশ। ওইদিন সংবাদ সম্মেলনে পালিয়ে যাওয়া পুত্রবধূর নামে প্রবাসী ছেলের পাঠানো অর্থ এবং তার দুই সন্তানকে ফেরত পাওয়ার জন্য সরকার প্রধান সহ সংশ্লিস্টদের সহযোগীতা কামনা করেন আবুল হাসেম কাজী।
এদিকে মুলাদী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাঠ ব্যবসায়ী রাহুল চৌধুরী গত ২৭ অক্টোবর মুলাদী থানায় এক লিখিত অভিযোগে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জোবায়ের আহমেদ জুয়েলের বিরুদ্ধে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ করেন।অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় গত ২৬ অক্টোবর তাকে (রাহুল) জিন্মি করে ৩ শ’ টাকার নন জুডিশিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে তার সাক্ষর রাখা হয়।চাঁদা না দিলে তাকে খুন- জখমের হুমকী দেয়ার অভিযোগ করেন রাহুল চৌধুরী। এই অভিযোগে থানায় মামলা রুজু না করে উল্টো সমঝোতার চেস্টা করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
একই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদ মাহমুদের বিরুদ্ধে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২২ লাখ টাকার চেক প্রতারনার একটি মামলা করেন তার ব্যবসায়ীক পার্টনার নার্গিস আক্তার কনা। চেক প্রতারনা মামলা দায়েরের পর কনার আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে তাকে ব্লাক মেইল করার অভিযোগ ওঠে মুরাদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি মামলা করেন কনা।থানায় করা মামলার অভিযোগে নার্গিস আক্তার কনা উল্লেখ করেন, পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে পার্টনারশিপে মুরাদ মাহমুদের সাথে ঠিকাদারী কাজ করতেন তিনি।এক পর্যায়ে ব্যবসায় বিনিয়োগের টাকা ফেরত চাইলে মুরাদ টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ ঘটনায় তার কাছে থাকা জামানতের চেক ব্যাংকে জমা দিলে ব্যাংক ওই প্রত্যাখ্যাত হয়।এ ঘটনায় তিনি আদালতে মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর বিভিন্ন সময় তার বাসায় যাতায়াতের সুযোগে আপত্তিকর ছবি তুলে মুরাদ ফেসবুকে পোস্ট করে তাকে ব্লাক মেইলের চেস্টা করে।
এ ঘটনায় তিনি পল্লবী থানায় মামলা দায়ের করেন।উপজেলার শীর্ষ ৩ নেতার বিতর্কিত কর্মকান্ডে বিব্রত স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। অপকর্ম করে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নকারী ৩ নেতাকে অপসারন করে মুলাদী উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দাবি করেছেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হোমায়ত উদ্দিন সুমন সেরনিয়াবাত বলেন, ছাত্রলীগ কারো কোন অপকর্মের দায় নেবে না। কেউ অপরাধ করলে তার দায় ব্যক্তির উপর বর্তায়। ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল পদে থেকে কেউ অপকর্ম করলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply