এইচ আর হীরা / সাকিবুল হৃদয়॥ যাত্রী হয়রানীতে বরিশাল শীর্ষে অবস্থানে নগরীর নথুল্লাবাদ থেকে মাওয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসগুলো। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত আদায় করার পাশাপাশি বস্তার ভিতরে আলু ভর্তি করার মতো যাত্রীদের মাইক্রোবাসে বসিয়ে যাত্রী সেবা দেয়া হচ্ছে।ফলে ঝুঁকি নিয়ে মাওয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় মাইক্রোবাস। অতিরিক্ত ভাড়া প্রদানে রাজী না হলে মাইক্রোবাসের স্টাফদের সাথে যাত্রীদের তর্কাতর্কি এমনকি হাতাহাতির গটনাও ঘটেছে অহরহ।
আর এদের রয়েছে একটি দালাল সেন্ডিকেট। ফলে অদূরে দারিয়ে থাকা পুলিশ প্রশাসনের লোকজনও দেখেও না দেখার ভ্যান করে থাকে । গত ৬দিন মাইক্রোবাস স্ট্যান ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। পটুয়াখালি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে নথুল্লাবাদ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে আসা যাত্রী সোহেল,ফরাদ,পারভেজসহ একাধীক যাত্রী এ প্রতিবেদককে বলেন, সাধারনত একটু আগে ঢাকা পৌছানোর জন্য মাইক্রোস্ট্যান্ডে যাই। অন্যান্য সময় জনপ্রতি আড়াই শত টাকা ভাড়া নিলেও এখন জনপ্রতি তিনশত টাকা থেকে ৪শত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া মাইক্রোবাসে সামনের সিটে বসতে হলে জনপ্রতি ৫শ’টাকা নেয়া হচ্ছে। তারা বলেন,বেশি ভাড়া দাবী করায় আমরা এর প্রতিবাদ করি এ কারনেই আমাদের তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায় ৩/৫ জন স্থানীয় মাইক্রো স্ট্যান্ডের শ্রমিক এসে আমাদের ধমক দিয়ে থাকেন।
মিন্টু নামের এক যাত্রী জানান, কিছুদিন পূর্বে স্ত্রীসহ ঢাকায় যাওয়ার জন্য সামনের সিটে বসে ভাড়া দিতে গেলে পাঁচশত টাকা দাবী করে। আমি প্রথমে ৪শত টাকা দিয়েছিলাম। পরে বেশি টাকা চাওয়ায় আমি মাইক্রোবাস থেকে নেমে যাই। কিন্তু আমাকে টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো ধমক দেয় তারা।পরবর্তীতে তাদের দাবীকৃত ৫শ’ টাকা দিয়েই যেতে হয়েছিলো আমাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নথুল্লাবাদ মাইক্রো স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করে সৈয়দ মামুন মীর। তিনি ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ার কারনে শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রন করেন।
এছাড়া তার দৈনিক হাজিরায় বেতনভুক্ত মাইক্রো স্ট্যান্ডের টাকা উত্তলন করেন ফয়সাল,কবির,আবুল কালাম আজাদ এবং ওয়াসিম নামের চার শ্রমিক।জানা গেছে,জামাই শহিদের অকাল মৃত্যুর পর থেকেই মাইক্রোস্ট্যান্ড দখল নেন সৈয়দ মামুন মীর। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক মাইক্রো ড্রাইভার জানান,মাইক্রোবাসে ১৩টি আসনের বিনিময়ে ৩হাজার ৯শ’ টাকার টিকিট কাটা হলেও আমাদেরকে প্রতি ট্রিপে যাত্রীদের টিকিটের ভাড়া বাবদ কাউন্টার থেকে দেয়া হয় মাত্র ২হাজার ৮শ’ টাকা।
বাকি ১১শ’ টাকার মধ্যে একশত টাকা গাড়ি পার্কিং সহ বিভিন্ন খরচের জন্য রাখা হয় এবং বাকি ১হাজার টাকা মামুন মীরকে দেয়া হয়।এসকল অভিযোগ এবং সুনির্দিষ্ট তথ্যের হিসেব অনুযায়ী গত ৪বছরে নথুল্লাবাদ মাইক্রো স্ট্যান্ড থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়েছে।এ ব্যাপারে সৈয়দ মামুন মীর বলেন,আমি দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ থাকার কারনে প্রায় ৭/৮ মাস হয়েছে নথুল্লাবাদ যাইনা ওখানে কি হচ্ছে বা না হচ্ছে আমার যানা নেই। তবে আমি এবং আমার পরিবারের কোনো সদস্য ওখান থেকে একটা টাকাও কখোনো ধরিনি।
তিনি আরো বলেন, আমার ছেলের নিজের ব্যাবসা রয়েছে এইসব ফুটপাতের টাকা আমাদের প্রয়োজন হয়না।এবিষয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. জাকির হোসেন মজুমদার জানান,সড়ক আটকিয়ে কোনো ধরনের স্টান্ড বসানো যাবেনা।যদি কারোর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের সত্যতা পেয়ে থাকি তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বলেন,মাঠ পর্যায়ে কোনো সংগঠন বা ব্যাক্তি নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারবেনা।স্ট্যান্ডের নামে চাঁদাবাজি করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।
এসকল চাঁদাবাজদের ধরতে আমাদের পুলিশ সদস্যরা মাঠপর্যায়ে ছদ্মবেশে কাজ করছে।তিনি আরো বলেন,নগরীর প্রতিটি নাগরিকের নিজ অবস্থান থেকে ট্রাফিক আইন মান্যকারী হয়ে, নিরাপদ যান চলাচলের সামাজিক দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে এই শহরকে একটি যানযট মুক্ত পরিবেশ উপহার দেয়া সম্ভব মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply