অনলাইন ডেস্কঃ বরিশাল নগরীর উত্তারাংশ ভাটিখানা এলাকায় প্রায় শতবর্ষী পুকুরটি রক্ষায় একাট্টা হয়েছে এলাকাবাসী। কয়েক হাজার পরিবারের উম্মুক্ত পানির উৎস্য এই পুকুর। মালিকানা সুত্রে এটি বৃহস্পতিবার রাতে ভরাট করা শুরু হয়েছে। পুকুরটি রক্ষায় শুক্রবার বিকেলে ওই এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে কয়েকশ নারী-পুরুষ। তারা পুকুর ভরাট প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে।
উন্নয়নের নামে ভরাটের হুমকিতে থাকা পুকুরটির অবস্থান নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটিখানা কাজীবাড়ির জামে মসজিদ সংলগ্ন। ভাটিখানা-আমানতগঞ্জ সংযোগ সড়কের পাশে বিশাল আয়তনের এ পুকুরটি এ এলাকার ঐতিহ্য। পুকুরের পূর্ব পাড়ে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের ফুফুর নামে প্রতিষ্ঠিত ‘আলতাফুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। বৃহস্পতিবার রাতে পুকুরের ঘাটলাসহ প্রায় ভেতরের দিকে দুই ফুট ভরাট করা হয়েছে।
কাজীবাড়ি জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক সেলিম মৃধা জানান, ১৯২৫ সালে ওই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় পুকুর খনন করে মাটি দিয়ে বিদ্যালয়ের ভিটি উচু করা হয়। আলতাফুন্নেছার বিশাল ভূসম্পত্তি ছিল ওই এলাকায়। তারাই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। কালক্রমে ক্রয়সুত্রে পুকুরটির মালিক হন নগরীর আলেকান্দা নিবাসী তৎকালীন প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদার প্রয়াত ফয়েজ আহমেদ। উত্তরাধিকার সুত্রে তার ছেলে-মেয়েরা এখন পুকুরটির মালিক।
সেলিম মৃধা জানান, প্রায় ১০ বছর আগে পুকুরটি কেনার জন্য মসজিদ কমিটির সঙ্গে ফয়েজ আহমেদের চুক্তি হয়েছিল। তিনি আকস্মিক মারা যাওয়ায় সেটি আর কেনা হয়নি। তার উত্তরাধিকাররা গোপনে অন্য কারও কাছে পুকুরটি বিক্রি করেছেন বলে তাদের ধারনা।
পুকুরের উপর স্থাপিত কাঠের ঘরের মুদি দোকানি মিন্টু মুন্সীর বাবা আজহার মুন্সী (কয়েক মাস আগে মারা গেছেন) কয়েক যুগ ধরে প্রয়াত ফয়েজ আহম্মেদের ওই এলাকার সম্পত্তি তত্বাবধান করেন। পুকুরটি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছেন আজাহার মুন্সীর স্ত্রী বিলকিস বেগম।
এলাকাবাসী জানায়, গত বুধবার পুকুর সেচ শুরু করে বৃহস্পতিবার দিনে মাছ ধরে নেয় মিন্টু ও তার পরিবার। তখন তারা মনে করেছিলেন মাছ ধরার জন্যই পুকুর সেচ করা হয়েছে। রাত অনুমানিক দেড়টার দিকে একের পর ট্রাক এসে পুকুরে বালু ফেলতে থাকে। বিপুল সংখ্যক বহিরাগত তরুণ-যুবক তখন সেখানে অবস্থান নিয়ে বালু ফেলার কাজ তদারকি করেন। কারা কী জন্য বালু ফেলছেন কিছু বুঝে উঠতে না পারায় রাতে এলাকাবাসী প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। শুক্রবার এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ক্ষোভ দেখা দেয়।
স্থানীয় কাউন্সিলর (৪ নম্বর ওয়ার্ড) তৌহিদুল ইসলাম বাদশা এলাকাবাসীর আন্দোলনে অংশ নিয়ে বলেন, সিটি করপোরেশণ নগরীর দেড়শ পুকুর সংরক্ষনের জন্য তালিকাভূক্ত করেছে। তার মধ্যে কাজীবাড়ি মসজিদ সংলগ্ন পুকুরটিও আছে। রাতের আধারে অসৎ উদ্দেশ্যে বালু ফেলে পুকুরটি ভরাটের চেষ্টা চালানো হয়েছে।
পুকুরের মালিকপক্ষের কেয়ারটেকার মিন্টু মুন্সী বলেন, মৃত ফয়েজ আহমেদের উত্তরাধীকাররা রাতে উপস্থিত থেকে পুকুর ভরাট করেছে। তারা বলেছে, সেখানে বহুতল ভবন করা হবে। বরিশাল নদী-খাল-জলাশায় রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, নগরীর মধ্যে মালিক হলেই পুকুর ভরাট করা যায় না। এ পুকুরটি নগরীর ঐতিহ্য। অগ্নিদূর্ঘটনা হলে তা নির্বাপনে এলাকায় পানি সরবরাহের একমাত্র উৎস্য এটি। পুকুরটি রক্ষার জন্য প্রয়োজনে আইনি লড়াই করবেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশালের পরিচালক আব্দুল হালিম বলেন, ভাটিখানা এলাকায় একটি পুকুর ভরাটের খবর তিনি শুনেছেন। বিকেলে ঘটনাস্থলে তার দপ্তরের কেমিস্ট মুনতাসুর রহমানকে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, পুকুর ভরাটের কোনো অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply