সুনান বিন মাহাবুব, পটুয়াখালী প্রতিনিধি ::মুঘল স্থাপত্যের নিদর্শন পটুয়াখালী সদর উপজেলার লাউকাঠী ইউনিয়নের শ্রীরামপুর জমিদারবাড়ি এবং জোড়া কবর বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীতে জমিদারি প্রথার সাক্ষী হয়ে আছে শ্রীরামপুর জমিদার বাড়ি। ১৯৯৬ সালে জোড়া কবরটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত¡ অধিদফতর কর্তৃক সংস্কার করা হয়েছিল। এরপরে একজন প্রহরিও নিযুক্ত করা হয়।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে জমিদারী প্রতিষ্ঠিত হয় মুঘল শাসনামলের বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলী খাঁন এর শাসনামলে। এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা শিবল খাঁ ছিলেন একজন হিন্দু ধর্মালম্বী। তখন তার নাম ছিল শ্রী শিব প্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তিনি এবং তার ভাই শ্রী ভব প্রসাদ মুখোপাধ্যায় নবাব মুর্শিদকুলী খাঁনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। শ্রী শিব প্রসাদ মুখোপাধ্যায় ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে নাম রাখেন শিবল খাঁ।
আর এতেই নবাব মুর্শিদকুলী খাঁন খুশি হয়ে তাকে জমি এবং মিয়া উপাধি প্রদান করেন। নবাব তাকে যে জমি দান করেন, তার পরিমাণ ছিলো এক ভাটায় যতদূর যাওয়া যায় তার সমান। পরবর্তীতে জমিদার শিবল খাঁর ছেলে কালে খাঁ জমিদারীর আওতায় আরো অনেক মৌজা যোগ করেন। মোট ৫৬টি মৌজা এই জমিদারীর আওতায় ছিলো।
এই বাড়িটির প্রবেশ পথে ছিল মোট ৮টি গেট। তবে বর্তমানে গেট না থাকলেও রয়েছে এর চিহ্ন। কিছু দূরত্বে আছে একটি পুকুর। এরকিছু পরেই বিতর্কিত অন্ধর কূপ, অন্ধর কূপটি বর্তমানে বন্ধ হয়ে গেছে। খাজনা দিতে না পারলে বা প্রজারা জমিদারের কথা না শুনলে প্রজাদের উপর চালানো হত অত্যাচার। যার নৃসংশতা আন্দাজ করা যায় না। বাড়িটির পিছনে আছে তিনটি বন্দিসালা। বন্দিসালায় রাখা হত ওই সকল প্রজাদের। অনেকের মতে ওই অন্ধর কূপের মধ্যে মানুষকে ফেলে দিয়ে রাজারা পরম আনন্দ উপভোগ করতো। বাচ্চা থেকে বুড়ো পর্যন্ত সমস্ত বয়সের মানুষকে এই অন্ধর কুপের মধ্যে ফেলে দেয়া হত।
অপরদিকে জমিদারবাড়ির এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু মোঘল স্থাপনা। বাড়িটির অদূরেই রয়েছে সুনিপুন শিল্পকর্ম খচিত একটি মসজিদ। মসজিদটি এখনো ব্যবহার করে চলছেন স্থানীয় মুসল্লিরা। মসজিদটির অদূরেই রয়েছে এ অঞ্চলে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করা কালে খাঁ মিয়া ও তার স্ত্রী জুলেখার জোড়া কবর।
স্থাণীয় বাসিন্দা রাহাত তালুকদার বলেন, সংস্কারের পরে এখানে একজন প্রহরীও নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এখানে কোনো প্রহরী নেই। দূর দূরান্ত থেকে এখনও অনেক দর্শনার্থী এই জমিদারবাড়িটি দেখতে আসে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাড়িটি সংস্কার না করলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে এই প্রাচীন ঐতিহ্য।
লাউকাঠী ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম খোকন বলেন, সরকারী উদ্যোগে জমিদারবাড়ি সংস্কারের ব্যবস্থা করলে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটেবে। প্রাচীন ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখলে তরুন প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে বলে জানান তিনি।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply