নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নারীদের গর্ভধারণ নিশ্চিতকরণ ডিভাইসটি প্রায় এক বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও তা দিয়ে কাজ চালাচ্ছে প্যাথলজি বিভাগ।
বর্তমানে যে ডিভাইস দিয়ে গর্ভধারণ টেস্ট করা হচ্ছে সেটি উৎপাদন করা হয়েছে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে। আর এটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে।
ডিভাইসটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় নারীদের গর্ভধারণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। গর্ভবতী না হয়েও ওই মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস দিয়ে পরীক্ষা করায় রিপোর্ট পজিটিভ আসছে। আবার গর্ভবর্তী থাকলেও অনেক সময় নেগেটিভ আসে। এভাবেই প্রায় ১ বছর ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সেবা নিতে আসা রোগীরা বিপাকে পড়ছেন।
এমন এক ভুক্তভোগী চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে স্বরূপকাঠি এলাকার আনিসুর রহমানের স্ত্রী কাজল বেগম শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার প্রেগেনন্সি টেস্ট করতে আসেন। টেস্ট করানোর পর রিপোর্টে তার গর্ভধারণ নিশ্চিত করা হলেও তার সন্দেহ হয়।
ওই সন্দেহে ফার্মেসি থেকে প্রেগ্নেন্সি কুইক টেস্ট দিয়ে নিজেই পরীক্ষা করেন। সেখানে দেখা যায় তিনি গর্ভবতী নন। এতে করে কাজলের শংকা আরও বেড়ে যায়।
তিনি পুনরায় হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে তার টেস্ট করাতে আসেন। সেই রিপোর্টেও তার গর্ভধারণ রিপোর্ট- সে গর্ভবতী বলে রিপোর্ট দেয়া হয়। এভাবে একের পর এক পজেটিভ-নেগেটিভ পরীক্ষার রিপোর্ট আসাতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন কাজল।
উপায়ান্তর না পেয়ে কাজল নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে তার পূর্বের পরীক্ষার রিপোর্ট দেখান। এতে করে চিকিৎসক পুরোপুরি নিশ্চিত হতে কাজলকে গর্ভধারণের আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে বলেন।
কাজল আল্ট্রাসনোগ্রামের রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসককে দেখালে গর্ভবতী নন বলে চিকিৎসক কাজলকে নিশ্চিত করেন। এতে করে শের-ই-বাংলা হাসপাতালের গর্ভধারণ ডিভাইসের পরীক্ষা ভুল বলে প্রমাণিত হয়।
একইভাবে আরও অনেক নারী শের-ই-বাংলা হাসপাতালের প্রেগেনন্সি টেস্ট করাতে এসে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। তাদের সবাই কাজলের মতো এভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
ওই মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস দিয়ে গর্ভধারণ পরীক্ষা অনিরাপদ বলে মনে করছেন সিনিয়র ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট ডা. আশিক দত্ত ও ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল।
তারা জানিয়েছেন, প্রেগনেন্সি টেস্ট ডিভাইসটির মেয়াদোত্তীর্ণর খবরটি আমাদের আগে জানা ছিল না। জানার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট টেকনোলজিস্টদের ওই ডিভাইস দিয়ে পরীক্ষা না করার নির্দেশ দিয়েছি। এ ছাড়া প্রায় ১ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস দিয়ে কিভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে সেটি খতিয়ে দেখা হবে।
তবে ইনচার্জ আশিষ কুমার সোম অসুস্থ অবস্থায় বাসায় চিকিৎসাধীন থাকায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বর্তমানে ওই পদে ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা মজিবর রহমান জানান, প্রেগনেন্সি টেস্ট ডিভাইসটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার খবরটি আমিও জানতাম না।
এ বিষয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন জানান, প্রেগনেন্সি টেস্ট ডিভাইসটির মেয়াদোত্তীর্ণর খবরটি আমাদের আগে জানা ছিল না। আমি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা নির্দেশ দিয়েছি।
এ ব্যাপারে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply