মজিবর রহমান নাহিদ ॥ দেশের অন্যান্য স্থানের মতো বরিশাল বিভাগের সদর দপ্তর হিসেবে খ্যাত বরিশাল জেলা ও নগরীতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আক্রান্তেরর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩’শ। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষে তথ্যঅনুযায়ী বরিশাল জেলায় সর্বমোট ৩৬৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
করোনার সংক্রমণ রোধে গত ১২ এপ্রিল লকডাউন ঘোষণা করে বরিশাল জেলা প্রশাসন।শুরু থেকে জেলা প্রশাসক এস,এম অজিয়র রহমানের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন করোনা রোধে কঠোরভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশ কমিনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বিপিএম (বার) এর নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। এছাড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সেনাবাহিনী, র্যাব-৮ সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।
বরিশালবাসীকে করোনা থেকে ভালো রাখতে পুলিশের অনেক সদস্য ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।প্রথম দিকে সরকারী নির্দেশনা মেনে মানুষ ঘরে অবস্থান করলেও লকডাউন কিছুটা শিথিল হওয়ার পরে অনেককে বিনা প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হতে দেখা গেছে। আবার কেউ কেউ প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হলেও মানছেনা সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব। যেসব দোকান খোলার অনুমতি নেই সেকল দোকানপাট নানা কৌশলে চলছিলো বেচাকেনা। নগরীর সদর রোডে হলুদ অটো-রিকসা এবং ব্যাটারী চালিত অটো-রিকসা চলাচলের অনুমতি না থাকলেও হরহামেশা চলাচল করতে দেখা গেছে। এদিকে দীর্ঘ দুই মাস লকডাউনের পর গত রোববার (৩১মার্চ) থেকে সিমীত আকারে গণপরিবহণ চালুর সিদ্ধান নিয়েছে সরকার।
পাশাপাশি খুলে দেওয়া হয়েছে হাটবাজার, দোকানপাট ও শপিংমল। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তা খোলা রাখা যাবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছে সরকার।গত ২৮ মে এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরপরই বরিশালে শুরু হয় মানুষের স্বাস্থ্যবিধি অমাণ্যের প্রতিযোগীতা। যে যার মতো পারছে বের হচ্ছে, যে যার মতো পারছে চলাচল করছে। মাক্স ছাড়া বের হলে ৬ মাসের জেল অথবা ১লক্ষ টাকা জরিমানার কথা জানিয়ে দেওয়া হলেও নগরী সহ জেলার বিভিন্ন সড়কে মাক্স ছাড়া অনেকেউ চলাচল করতে দেখা গেছে।৩১মার্চ থেকে সিমীত আকারে লঞ্চ এবং বাস চলাচল শুরু হয়েছে। রবিবার সকাল থেকে নগরীতে জনসাধারনে জনস্রত দেখা যায়। এমনকি অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারনে শহরের কোথাও কোথাও জানজট সৃষ্টি হতেও দেখা গেছে।
সকালে বরিশাল নৌ বন্দরে অভ্যন্তরীন রুটে যাত্রীদের চাপ অনেকটা কম থাকলেও বিকেল থেকে বরিশাল নদী বন্দরে শুরু হয় ঢাকাগামী যাত্রীদের উপচে পরা ভীড়।সরেজমিনে দেখা যায় বিকেল ৫টার আগেই লঞ্চের নির্ধারিত আসন পূর্ণ হয়ে যায়। সরকারের পক্ষ থেকে বার বার সিমীত সংখ্যত যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়ার কথা থাকলেও কে মানছে কার কথা! খালেক বিশ্বাস নামে এক যাত্রীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘জীবিকার তাগিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি, এখন এরকম এলাকায় পরে থাকলে বউ-বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।’ সালেহা খাতুন নামে এক পোশাক শ্রমিক বলেন, ‘অনেক দিন ধইরা ঘরে আইটকা আছি, সরকার যা দেখে হেইয়া আর কয় দিন থায়ে, ৫ জনের সংসার। প্যাডে ভাত না থাকলে করোনা দিয়া কি করমু? হ্যার পান্নেই ঝুঁকি লইয়্যা যাইতেছি।’পরিস্থিতি মনিটরিং করতে ঘাটে যায় জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। বিকেলে থেকেই বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠুকে মাইকিং করে স্বাস্থ্যবিধি মানতে যাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানায়।
এদিকে মোবাইল কোর্ট চলাকালীন সময় ছাড়া নৌ পুলিশ ফাঁসির কর্মকর্তা ও সদস্যদের ঘাটে না দেখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। আকিব ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আমার অফিসের কাজে ঢাকা যাওয়ার খুব প্রয়োজন ছিলো, কিন্তু ঘাটে এরকম ভীড় দেখে আর লঞ্চে উঠার সাহস হয় নি। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো বিকেল থেকে আমি ঘাটে অবস্থান করছি কিন্তু একজন নৌ পুলিশ আমি দেখতে পেলাম না! যখন মোবাইল কোর্ট এলো তখনই নৌ পুলিশের ইনচার্জ হাজির। শুরু থেকেই যদি প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তা থাকতো তাহলে হয়তো এরকম স্বাস্থ্যবিধি অমান্য কেউ করতে পারতো না।’অন্যদিকে বরিশাল রূপাতলী ও নতুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিণালেও দেখা যায় যাত্রীদের উপচে পরা ভীড়। টিকিট সংগ্রহের জন্য দেয়া যায় দীর্ঘ লাইন।
বাসের যাত্রীদের স্প্রে করা হচ্ছে নাম মাত্র। নতুল্লাবাদ থেকে মাওয়া ঘাটে উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসে বরাবরের মতো অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।বরিশালবাসীকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক এস,এম অজিয়র রহমান বলেন,‘করোনা সংক্রমণ রোধে শুরু থেকেই মাঠে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। জরুরী প্রয়োজনে কেউ বাসা থেকে বের হলে অবশ্যই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলবেন। সকলে স্বাস্থ্যবিধি মেন চলছে আশা করছি খুব দ্রুত আমরা এই মহামারী থেকে প্রিয় বরিশাল এবং দেশকে রক্ষা করতে পারবো।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply