শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সন্ধ্যা ৭:৪১

তামাক পণ্য উৎপাদন-বিক্রি বন্ধ হয়নি

তামাক পণ্য উৎপাদন-বিক্রি বন্ধ হয়নি

dynamic-sidebar

অনলাইন ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের কারণে সিগারেটসহ সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন ও বিতরণ সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে বুধবার (২০ মে) দুপুরে জানিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তবে মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের কিছুক্ষণ পর বিকেলে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামগ্রিক বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তামাকশিল্প চালু রাখা যুক্তিসঙ্গত হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় মনে করে। এর মাধ্যমে কার্যত সিগারেটসহ তামাক পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না বলেই জানানো হলো।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তামাক উৎপাদন এবং তামাকজাতীয় পণ্য সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ মর্মে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিবেশিত সংবাদের প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।

“এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হলো, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রাথমিক পর্যায়ে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের সূচনালগ্নে দুটি তামাক কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় যথাক্রমে গত ৩ এপ্রিল এবং ৫ এপ্রিল সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধপত্র প্রেরণ করে। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব গত ৯ এপ্রিল জরুরি সেবা ও সরবরাহ শৃঙ্খল যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসহ পরিপত্র জারি করেন। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব গত ২৪ মার্চ জরুরি সেবা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের বিষয়ে একটি প্রেস নোট জারি করেন।”

“উল্লেখ্য, ১৯৫৬ সালের The Control of Essential Commodities Act অনুযায়ী সিগারেট একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। এ বিবেচনায় শিল্প মন্ত্রণালয় কোভিড-১৯ সংক্রমণ চলাকালে তামাক কোম্পানির উৎপাদন, সরবরাহ ও পরিবহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহায়তার অনুরোধ জানিয়ে পত্র দিয়েছিল”- বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের উদ্দেশ্যের সাথে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কোনো ভিন্নতা নেই। শিল্প মন্ত্রণালয়ও প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ সালের মধ্যে ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণার নীতিকে পূর্ণাঙ্গভাবে সমর্থন করে এবং এ লক্ষ্যে কাজ করছে।

“টোব্যাকো বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। এ শিল্পের সাথে দেশের হাজার হাজার প্রান্তিক চাষি এবং শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি জড়িত। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও শিল্পোন্নত দেশগুলোসহ গোটা বিশ্বে এখন পর্যন্ত তামাকশিল্প চালু রয়েছে। বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এককভাবে এ শিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। আমাদের জাতীয় রাজস্ব আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ এ শিল্পখাত থেকে আসে। এই শিল্প হুট করে বন্ধ করে দেয়া হলে একদিকে যেমন দেশ বিরাট অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগও বন্ধ হয়ে যাবে। আবার তামাক পাতা না কিনলে প্রান্তিক চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারণা দেবে। ফলে আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ধূমপান কিংবা তামাকজাতীয় পণ্যের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও এর সেবনকারীরা তা জেনে-শুনেই সেবন করছেন। এ শিল্প সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিলেও তারা এটি সেবন করবেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মোটিভেশন ছাড়া শুধু সাময়িক উৎপাদন বন্ধ করে করোনাকালে ধূমপান প্রতিরোধ করা যাবে না। অধিকন্তু এর উৎপাদন বন্ধ হলে কালোবাজারিরা উৎসাহিত হবে এবং আমদানিকৃত সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের ওপর দেশ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ও রাজস্ব আয় হারাবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল ধূমপায়ী ও তামাকজাতীয় পণ্য সেবীদের মধ্যে এটি পরিহারের জন্য প্রচার জোরদার করতে পারে।

শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই বৈশ্বিক অর্থনীতির মতো বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে যথেষ্ট চাপ তৈরি হয়েছে এবং আগামী দিনে অনিবার্যভাবে এই চাপ বাড়বে। করোনা প্রাদুর্ভাবের ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিল্প-কারখানা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেকটা স্থবির হয়ে রয়েছে। এতে প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক লোকজন বেকার হয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে নগদ অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করলেও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সরকারের জন্য দীর্ঘদিন এটি চালিয়ে নেয়া কষ্টকর হবে। এই অবস্থায় বিদ্যমান কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং শিল্প উৎপাদন বন্ধ করলে, তা হবে জাতীয় মারাত্মক ক্ষতি।

“সামগ্রিক বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ শিল্প চালু রাখা যুক্তিসঙ্গত হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় মনে করে। পাশাপাশি ধূমপান ও তামাকজাতীয় পণ্য সেবনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল সময়ের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মোটিভেশনাল কার্যক্রম গ্রহণ করবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় আশা প্রকাশ করছে।”

এর আগে দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্য সহায়ক পরামর্শক কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, সিগারেটসহ সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন ও বিতরণ সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির উপস্থিতি সভায় শিল্পমন্ত্রী বলেন, সিগারেটসহ সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ বন্ধের নির্দেশনা, এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দিয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় নেয়া হয়। আজ শিল্প মন্ত্রণালয় মিটিং করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব কিছু সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

যে সেক্টর থেকে ২৩ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা আয় হয় সেখানে একদিনের মাথায় এতো বড় সিদ্ধান্তের ফলে রাজস্ব আয়ে প্রভাব পড়বে কি-না— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে বিপণন সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। যেহেতু সিগারেট করোনা রোগের সাথে সম্পৃক্ত তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও ইতোপূর্বে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা সে নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগেও তামাকজাতীয় পণ্যের প্রতিষ্ঠান যেমন- ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোসহ সকলকে বিপণনসহ সবকিছুর বিষয়ে সর্বাত্মক সহায়তা করেছি। যেহেতু আমাদের বিশাল একটা রাজস্ব তাদের কাছ থেকে সরকার পেয়ে থাকে। নীতিগতভাবে বলতে গেলে, রাজস্ব বন্ধ করে তারপর তাদের বলতে পারি। দ্বৈতনীতি তো হতে পারে না। কিন্তু আজকের পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় এটা একটি প্রেসক্রিপশন। এটা এখন একটা ওষুধের প্রেসক্রিপশন। এ মুহূর্তে তামাকজাত পণ্য আরও ক্ষতিকারক বিধায় সরবরাহ-বিপণন সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

কতদিন পর্যন্ত এটা কার্যকর থাকবে— জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী বলেন, সেটা সময় হোক, আমরা পরে বসে সিদ্ধান্ত নেব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সবাই মিলে রিভিউ করে সিদ্ধান্ত নেব।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের তামাক কোম্পানির উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন এবং তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার একটি চিঠি দেয়।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম-সচিব মো. খায়রুল আলম শেখের সই করা চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাককে কোভিড-১৯ সংক্রমণ সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার কথা বলছে। ধূমপানের কারণে শ্বাসতন্ত্রের নানাবিধ সংক্রমণ এবং কাশিজনিত রোগ তীব্র হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাধিক গবেষণা পর্যালোচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। এছাড়ও গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ধূমপায়ীর মৃত্যুঝুঁকিও ১৪ গুণ বেশি।

এতে আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাময়িকভাবে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, সীসা বার, উন্মুক্তস্থানে পানের পিক ফেলার মতো বিষয়গুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে করোনা ভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তামাক কোম্পানিকে দেয়া অনুমতি প্রত্যাহারসহ সকল তামাক কোম্পানির উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন এবং তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করার জন্য চিঠির শেষ অংশে অনুরোধ করা হয়।

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net