আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সতর্কতার মাত্রা না বাড়ালে নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২২ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে আমেরিকায় এবং এই সংখ্যাটা ব্রিটেনের ক্ষেত্রে ৫ লাখ। এমনটাই দাবি করেছেন ব্রিটেনের গবেষকরা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার এরই মধ্যে এই ভাইরাসের মোকাবেলায় আমেরিকায় প্রবেশে ইউরোপীয়দের ওপর এক মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এবার ওই পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করেই করোনা মোকাবেলায় দেশজুড়ে কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে বরিস জনসন সরকারও।
শুধু করোনা আক্রান্তদের পাব-থিয়েটার বা অন্যান্য সামাজিক মেলামেশা থেকে বিরত রাখাই নয়, গুরুতর অসুস্থ সত্তরোর্ধ্বদের আইসোলেশনে রাখার পরামর্শও দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
লন্ডনে পাঠরত কলকাতার এক তরুণের দেহে এরই মধ্যেই ‘কোভিড-১৯’-এর অস্তিত্ব মিলেছে। তবে সেই লন্ডন তথা ব্রিটেনের করোনা-পরিস্থিতি ইতালি বা ইরানের মতো ভয়াবহ না হলেও এরই মধ্যে নড়েচড়ে বসেছে সে দেশের সরকার।
সোমবার (১৬ মার্চ) থেকেই করোনা মোকাবেলায় আরও কড়া পদক্ষেপের কথা জানায় বরিস জনসন সরকার।
মূলত ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পর্যবেক্ষণের পরই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথেমেটিক্যাল বায়োলজির এক অধ্যাপক নিল ফার্গুসনের নেতৃত্বে যে পর্যবেক্ষণে দাবি করা হয়েছে, করোনা মোকাবেলায় আরও কড়া না হলে ব্রিটেনে মৃত্যু ছুতে পারে ৫ লাখ।
সাম্প্রতিক কালে চীন ছাড়াও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া বা মৃত্যুর হার হু হু করে বেড়েছে ইতালিতে। এরই মধ্যে আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে সে দেশে। আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৩১ হাজারেরও ওপরে। সেই ইতালি থেকেই করোনা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে ওই পর্যবেক্ষণ করেছে ইম্পিরিয়াল কলেজের গবেষকরা।
১৯১৮ সালে বিশ্বজুড়ে ফ্লু-এর কারণে যে অতিমারি হয়েছিল, তার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে করোনাকে। গোটা বিশ্বে ৫ কোটিরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। কেবল ব্রিটেনেই তাতে মৃত্যু হয়েছিল ২ লাখ ২৮ হাজার মানুষের।
গবেষকদের দাবি, এখনই সতর্ক না হলে মৃত্যুর হারে সে সংখ্যাকেও ছাপিয়ে যাবে ব্রিটেন। ব্রিটেন ছাড়াও করোনাভাইরাসের কোপে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ২২ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
হোম আইসোলেশনের মতো পদক্ষেপ করলেও এই সংখ্যায় বেশি হেরফের হবে না বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।
তাদের মতে, এই ভাইরাসের মোকাবেলায় সমাজের বৃহত্তর অংশকে পাব, থিয়েটার বা ক্লাবে জমায়েত থেকে বিরত থাকার মতো কড়া দাওয়াই দিতে হবে। তবেই ওই মৃত্যুহার কমানো যাবে। এই পর্যবেক্ষণের দাবিকেই কার্যত স্বীকৃতি দিয়ে সে নির্দেশ জারি করেছে ব্রিটিশ সরকার।
অধ্যাপক নিল ফার্গুসনের পাশাপাশি ওই পর্যবেক্ষকদের মধ্যে ছিলেন ইম্পিরিয়াল কলেজের ইনফেকশাস ডিজিজ এপিডেমিয়োলজির অধ্যাপক আজরা ঘনি। তার মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ ব্রিটেনের সামাজিক তথা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রবল চাপ তৈরি হবে।
তিনি বলেন, সামাজিকভাবে এবং আমাদের অর্থনীতিতেও এই ব্যবস্থা বেশ চাপ তৈরি করবে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গ্লোবাল হেলথ এপিডেমিয়োলজি-র এক বিশেষজ্ঞ টিম কোলবোর্নের মতে, এই পর্যবেক্ষণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, করোনা নিয়ে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ বেশ গুরুতর।
করোনা মোকাবেলায় দ্রুত পদক্ষেপ না করার অভিযোগ উঠেছে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে। জনস্বাস্থ্য বিশষজ্ঞদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে। তবে এই পর্যবেক্ষণ প্রকাশিত হওয়ার পর করোনা মোকাবেলায় আরও সক্রিয় হয়েছে প্রশাসন।
প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে করোনা মোকাবেলায় পরিকল্পনা আরও দ্রুত রূপায়ণের চেষ্টা শুরু হয়েছে।
সূত্র……..দৈনিক জাগরণ
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply