শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৭:০১

শিরোনাম :
রেমিটেন্স আহরণে রূপালী ব্যাংকের ২ দিন ব্যাপী ক্যাম্পেইন সম্পন্ন সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা বরিশালের দুই উপজেলায় বৈধতা পেলেন ২৫ প্রার্থী ঝালকাঠিতে বেপরোয়া ট্রাক কেড়ে নিল ১৪ প্রাণ বরিশাল সদরে ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাদিস মীরের মনোনয়ন দাখিল বরিশালে তীব্র গরমে নাভিশ্বাস জনজীবন,বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ! বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জসিম উদ্দিনের মনোনয়নপত্র দাখিল বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এসএম জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র দাখিল দুই উৎসবের ছুটি শেষে বরিশাল থেকে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ ঈদ আনন্দ থাকতেই বরিশালে বইছে পহেলা বৈশাখের আনন্দ

মাদক, জুয়া আর উপ-দলীয় সংঘাতে বিপর্যস্ত ববি

dynamic-sidebar

শফিক মুন্সি ::

শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন উপদলের ধারাবাহিক সংঘাতে উত্তপ্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার, হলে সিট দখল ও নবীন শিক্ষার্থীদের দলে টানাই এসব সংঘাতের মূল কারণ হিসেবে সামনে উঠে এসেছে । ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত সংঘাতের ঘটনাগুলোয় আহত হয়েছে অনেকে৷ আছে ছাত্রী নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগ।সংঘাতের সাথে সাথে মাদকে সয়লাব পুরো ক্যাম্পাস এমনটাই নিশ্চিত করেছে বিভিন্ন সূত্র । সংঘাতের ঘটনাগুলোয় ঘুরেফিরে যাদের নাম আসছে তাদের সঙ্গেই মাদক সংশ্লিষ্টতা আছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী। বহিরাগত মাদকসেবীদের জন্যও নিরাপদ জায়গা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সহ আশেপাশের বিভিন্ন স্থান। আর শিক্ষার্থীদের এসব অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করার প্রবণতা ।তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জুয়া, মাদক ও সংঘাতের ব্যাপারে জানানো হয়েছে হুঁশিয়ারি। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে দুষ্কৃতকারী যেই হোক কোন ছাড় নেই।মাদকের বিরুদ্ধে আমরা শূন্য সহিষ্ণুতার নীতিতে আছি “।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সেখানকার শেখ হাসিনা হলের পিছনের তালতলা, বঙ্গবন্ধু হলের পার্শ্ববর্তী ভোলা – বরিশাল সড়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয় সম্মুখেের নাহিয়ান ভিলা দিনের যেকোনো সময় মাদক সেবনের নিরাপদ জায়গা হিসেবে পরিচিত। এছাড়া সন্ধ্যার পর শেখ হাসিনা হলের সম্মুখের ইটের রাস্তা ও পাওয়ার স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় জমে ওঠে মাদক সেবীদের আড্ডা। এসব মাদক সেবনের জায়গা গুলোয় বহিরাগতদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ও আশেপাশে পুলিশি নজরদারি কম থাকায় শহরের মাদক সেবিদের জন্যও জায়গা গুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ আর এসব কারণে মাদকবিক্রেতাদের কাছে দিনকে দিন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। কথিত আছে, নাহিয়ান ভিলায় মাদকের যোগান দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরীরত একজন কর্মচারী নেতা।

শহরের মাদক বিক্রেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের মাদকদ্রব্য প্রবেশ করায় নির্দিষ্ট প্রতিনিধির মাধ্যমে। প্রতিনিধি হিসেবে তারা অসচ্ছল পরিবার থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও টার্গেট করে। এর প্রধান কারণ বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সহজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সন্দেহে পড়ে না৷ উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, গত বছর ব্যবস্থাপনা বিভাগের আরাফাত হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী মাদকদ্রব্য ইয়াবার বড় ধরণের চালন সহ পুলিশের হাতে ধরা পরে। আরাফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ চালাতে গিয়েই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছিল ৷ আরাফাতের ঘটনা সামনে আসার পর নড়েচড়ে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিশেষ নজরদারিতে সেখানকার বঙ্গবন্ধু হলের একটি কক্ষে মাদকসেবনের আলামত পাওয়ায় সেটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছিল। সেসময পুলিশ বাহিনীও বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকবার অভিযান চালায় বলে জানা গেছে।

বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মাদক ব্যবসার প্রশার আবারো লক্ষ করা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে৷ আর এসব মাদক ব্যবসার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক সময়ের সংঘাত গুলোয় জড়িত একাধিক উপদলের নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সংঘাতে জড়ায় বাংলা বিভাগের তাহমিদ জামান নাভিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ফাত্তাহুর রহমান রাফির উপদলসমূহ। তাদের সংঘাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হয় ৪ জন। জানা গেছে নাভিদের উপদলের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী নাহিয়ান ভিলার মাদকের ডেরায় নিয়মিত উপস্থিত হয়। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের আল সামাদ শান্তর উপদলের সতীর্থরা। এরা সবাই ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। শান্তর উপদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তারা গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে শেরে বাংলা হলের একটি কক্ষে শাহজালাল নামে একজন শিক্ষার্থীর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। এই নাভিদ ও শান্ত দুজনেই বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত অবস্থায় আছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আরেকটি শক্তিশালী উপদল নেতৃত্ব দেয় হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের হাফিজুল ইসলাম। অভিযোগ আছে গত ৫ই মার্চ হাফিজ তাঁর সহযোগিদের নিয়ে একই বিভাগের সতীর্থ রাফসান জামির ওপর হামলা চালায়। ওই হামলার বিচার চেয়ে রাফসান জানি উপাচার্য বরাবর আবেদন করলে ঘটনাটি গণমাধ্যমে আলোচনায় আসে৷ তবে পরে অবশ্য নিজেরা মিমাংসা করে ফেলেছে বলে রাফসান জানি নিশ্চিত করে৷ এদিকে গত ১লা মার্চ গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল নওরীন উর্মির ওপর হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত হাফিজ সহ তাঁর উপদলের একাধিক সহযোগী। গত ৯ই মার্চ নগরীর বন্দর থানায় মেয়ের ওপর হামলার ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করেন উর্মির বাবা আব্দুল মান্নান মৃধা। সেই অভিযোগটি দুদিন পরে গত বুধবার মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে। তবে ঐ হামলার ঘটনায় শুরু থেকেই দোলাচালে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হাফিজের পক্ষে বিভিন্ন মিছিল ও সমাবেশ করে হামলার অভিযোগকারী উর্মিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে একদল শিক্ষার্থী।

এছাড়া নিয়মিত জুয়ার আসরে অংশগ্রহণ করার অভিযোগও পাওয়া গেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। জুয়ার আসর ও মাদকের আড্ডা বসে এমন অভিযোগ আমলে নিয়ে বঙ্গবন্ধু হলের ৩০০৫ নম্বর কক্ষটি সিলগালা করে দিয়েছিলো হল কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়টির শেরে বাংলা হলের টিভি রুমের পাশে নিয়মিত জুয়ার আসর বসে বলেও জানা গেছে। হল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট কোন অভিযোগ না পেলেও জুয়া খেলার বিষয়টি তাদের কানে এসেছে।তারা এর বিরুদ্ধে কয়েকবার অনানুষ্ঠানিক অভিযানও চালিয়েছেন৷ তবে জুয়া খেলার জন্য শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ সময়ে তাদের মেস ও বাসা-বাড়িকেই ব্যবহার করে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি আরো নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী মরহুম শাহ আলম খান সড়কের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জুয়ার আসর বসে। নাহিয়ান ভিলা, তালতলা কিংবা ভোলা-বরিশাল সড়কের মাদক স্পট থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ে এসব জুয়ার আসরে নিয়মিত সম্মিলিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ব্যাক্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস। তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণের প্রমাণ পেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷ সাম্প্রতিক সংঘাতের ব্যাপারে তিনি বলেন, ” ইতোমধ্যে ২ শিক্ষার্থীকে প্রাথমিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। কয়েকটি ঘটনার তদন্ত ও অনুসন্ধান চলছে৷ রিপোর্ট হাতে পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে”। জুয়া, মাদক ও সংঘাতের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবার কথা জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খানও। তিনি বলেন, ” বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নিরাপদ ও সুষ্ঠু রাখতে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কয়েকটি মামলা গ্রহণ করেছি এবং তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি “। তিনি আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রশাসনকে সাথে নিয়ে মাদক, জুয়া ও সহিংসতার বিরুদ্ধে নজরদারি ও ব্যবস্থা গ্রহণের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net