বৃহস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১২:৫২

শিরোনাম :
সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা বরিশালের দুই উপজেলায় বৈধতা পেলেন ২৫ প্রার্থী ঝালকাঠিতে বেপরোয়া ট্রাক কেড়ে নিল ১৪ প্রাণ বরিশাল সদরে ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাদিস মীরের মনোনয়ন দাখিল বরিশালে তীব্র গরমে নাভিশ্বাস জনজীবন,বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ! বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জসিম উদ্দিনের মনোনয়নপত্র দাখিল বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এসএম জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র দাখিল দুই উৎসবের ছুটি শেষে বরিশাল থেকে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ ঈদ আনন্দ থাকতেই বরিশালে বইছে পহেলা বৈশাখের আনন্দ সাংবাদিক মামুন অর রশিদের মায়ের মৃত্যুতে এস এম জাকির’র শোক

ববি ছাত্রীর ওপর হামলা ঘটনার ‘রহস্য ঘনীভূত’

dynamic-sidebar

শফিক মুন্সি ::

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ছাত্রী জান্নাতুল নওরীন উর্মির ওপর ‘হামলার অভিযোগ’ ঘটনা আটকে পড়েছে রহস্যের বেড়াজালে। গত ১লা মার্চ হামলার ঘটনার পর ছাত্রদলের রাজনীতি করা উর্মিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৪মার্চ দুপুরে। তাঁর শরীরে আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের যে স্থানে তার ওপর হামলার অভিযোগ করা হচ্ছে তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে অনেকে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক – শিক্ষার্থীর দাবি একাডেমিক ভবনের যে স্থানে উর্মি তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ করছে সেখানে এমন ঘটনা অসম্ভব। অন্যদিকে, ঘটনার এতদিনেও আহত উর্মির পক্ষ থেকে থানা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন অভিযোগ করা হয় নি। যদি সত্যি তাঁর ওপর হামলা হয়ে থাকে তবে লিখিত অভিযোগ কিংবা আইনী প্রক্রিয়ায় যেতে উর্মির পরিবারের এত অনীহা কেন সে ব্যাপারে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। হামলার ঘটনায় নিজেরা নিরাপত্তাহীনতায় আছে দাবি করে উর্মির বড় বোন মুঠোফোনে জানান, ছাত্রদলের রাজনীতি করায় এর আগেও উর্মিকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। হামলার পরেও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের পরিচয়ে মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত ঘটনা ধামাচাপা দিতে তাদের হুমকি দিয়েছে। তবে, সচেতন শিক্ষার্থীর ব্যানারে শিক্ষার্থীদের একটি দল এ ঘটনাকে মিথ্যা ও সাজানো বলে দাবি করছে। উর্মি এখনো কারো বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ না করলেও এ শিক্ষার্থীরা রবিবার ‘উর্মি কাহিনি’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে। তাঁরা হুশিয়ারী দিয়েছে হামলার ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত না হলে উর্মিকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে।

এদিকে নিরাপত্তা শঙ্কা নিয়ে গণিত বিভাগের আহত এ শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন। ঘটনার এক সপ্তাহ পর গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ব্যাপারে একটি ‘তথ্য অনুসন্ধান’ কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা ঘটনা বিশ্লেষণ করে জানাবে এ ব্যাপারে তদন্তের কোনো প্রয়োজন আছে কিনা। উর্মির পরিবার ও বরিশাল মহানগর বিএনপির দাবি ‘অনুসন্ধান কমিটি’ নিরপেক্ষ থাকলেই এ হামলা রহস্যের সমাধান সম্ভব। উর্মির পক্ষ থেকে এর আগে গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের ব্যাপারেও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। জানা গেছে,হামলার ঘটনার দিন উর্মির ভেক্টর ক্যালকুলাস (এমএইচ ২২২) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৪৫ মিনিট আগে কোন কারণ ছাড়াই উর্মির উত্তরপত্র টেনে নিয়ে হল থেকে বের করে দেন হল পরিদর্শক গণিত বিভাগের প্রভাষক সুজিত কুমার বালা। হামলাকারীরা আগে থেকেই এই শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে ধারণা করছে তারা৷ তবে এমন সন্দেহকে সম্পূর্ণ অমূলক ও বাস্তবতা বিবর্জিত বলে মনে করছেন ওই শিক্ষক। তিনি বলেন, ওইদিন নির্ধারিত সময়ের বেশ আগে উর্মি নিজেই নিজের উত্তরপত্র জমা দেয়। এ ব্যাপারে হলে উপস্থিত অন্যান্য পরীক্ষার্থীরাও সাক্ষী দিতে পারবে। নিজ শিক্ষার্থীর হামলাকারীর সঙ্গে যোগসাজশ করার মতো মানসিকতা কোনো শিক্ষকেরই থাকতে পারে না।

ঘটনাসূত্রে জানা যায়, গত ১লা মার্চ বিকেল পৌনে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সিঁড়িতে তাকে ঘিরে ধরে একদল মুখোশধারী। এ সময় সে চিৎকার দিলে তার মুখ চেপে ওই ভবনের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে লাঠিসোটা দিয়ে মারধর করে তারা। পরে তার হাতে থাকা জ্যামিতি বক্সের কাটা কম্পাস দিয়ে উর্মির স্পর্শকাতর অঙ্গসহ তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করা হয়। ঘটনার পর কোনমতে বাসায় ফিরে গেলেও নিরাপত্তার অভাবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি না করে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।কিন্তু বাসায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত বুধবার দুপুরে উর্মিকে ভর্তি করা হয় শের-ই বাংলা মেডিকেলের মহিলা সার্জারি-২ ইউনিটে। উর্মি এবং তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আঘাতের জায়গা গুলোয় বর্তমানে ইনফেকশনের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তাঁর ওপর হামলার ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ঘটে নি বলে দাবি হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এ কে আরাফাতের। তিনি জানান, যে সময়ে এবং যে জায়গায় উর্মির ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হচ্ছে তা সঠিক নয়।কারণ যেস্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে দাবি করা হচ্ছে সেখানে মুখোশধারী কোন ছেলের উপস্থিত হবার সুযোগ নেই।এমনকি আশেপাশে বিভিন্ন বিভাগের অবস্থান হওয়ায় ওই স্থানে সামান্য ধ্বস্তাধস্তি হলেও সেটা দৃশ্যমান হবার কথা।কিন্তু এতদিনেও এ ঘটনার কোনো চাক্ষুষ সাক্ষী পাওয়া যায় নি।। গণিত বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত তাঁর বিরুদ্ধে উর্মির বড় বোনের আনীত অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি জানান, উর্মি আমার বিভাগের ছোট বোন। গণমাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদ দেখে তার খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য ফোন দিই। তার ওপর হামলার ঘটনা আমার কাছে মিথ্যা মনে হয়েছে। তাই তাকে অনুরোধ করেছি অন্তত সম্মানিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোন মিথ্যা অভিযোগ যেন সে না উত্থাপন করে।

লিখিত অভিযোগ না এলেও সাপ্তাহিক বন্ধের দিন গত শনিবার তড়িঘড়ি করে একটি ‘তথ্য অনুসন্ধান’ কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিন সদস্যের এ কমিটির প্রধান লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসনুভা হাবিব জিসান। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড.রহিমা নাসরিন ও মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিউদ্দিন সাব্বির। কমিটিকে পাঁচ (০৫) কর্মদিবসের মধ্যে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে রিপোর্ট জমা দেবার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। শনিবার (০৭ মার্চ) বিকেল সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডি ও শৃঙ্খলা উপকমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনুসন্ধান কমিটির সদস্য মহিউদ্দিন সাব্বির জানান, আমরা বিভিন্ন ক্লু ধরে ঘটনাটির ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করবো। হামলার সঙ্গে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ জড়িত ছিল কিনা এবং ঘটনাটি আসলেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখবো। এদিকে তথ্য অনুসন্ধান কমিটিকে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ অবস্থানে থাকার দাবি জানানো হয়েছে বরিশাল মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে। সংগঠনটির মহানগর সম্পাদক জিয়াউদ্দিন শিকদার বলেন, উর্মির সঙ্গে কারো পারিবারিক বা ব্যাক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল বলে আমার জানা নেই। তাঁর ওপর হামলাকে আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবেই দেখছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আন্তরিকতার সাথে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তবে অবশ্যই নিন্দনীয় এ হামলার পিছনের কুশীলবদের বের করতে পারবে।

উর্মির ওপর এ হামলার ঘটনায় গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও সরব হয়েছে। উর্মির ওপর হামলার সত্যতা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বিস্তর আলোচনা চলছে সেখানে।ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজ থেকে দাবি করা হচ্ছে ভারতের বিতর্কিত নাগরিক আইন নিয়ে কথা বলাতেই উর্মির ওপর হামলা করা হয়েছে। আবার, তাঁর নিজের বিশ্ববিদ্যালয়েই এ হামলার ঘটনায় দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে চালু করা বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ‘উর্মি কাহিনী’কে সাজানো নাটক হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া সাম্প্রতিক শিক্ষার্থী সহিংসতা ও নির্যাতনের বিভিন্ন অপপ্রচারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখে বরিশাল – পটুয়াখালী মহাসড়কে এ আয়োজন সম্পন্ন হয়। সমাবেশে বক্তারা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা উঠে আসছে। যেগুলোর কিছু ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য আবার কিছু ঘটনা আমাদের মধ্যে দ্বিধার সৃষ্টি করছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে গণিত বিভাগের উর্মির ওপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে হামলার ঘটনা সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত । গণমাধ্যমে এসব ভিত্তিহীন অভিযোগের কারণে জাতীয়ভাবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে নেতিবাচক ও অনিরাপদ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে বলে দাবি করেন বক্তারা। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা আরো উল্লেখ করেন, উর্মি এই নিয়ে তিনবার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সে সামনে তার ছাত্রত্ব হারাবে। আবার সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নতুন কমিটি হতে যাচ্ছে। নিজের ছাত্রত্ব অভিনব কায়দায় টিকিয়ে রাখতে এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে নিজেকে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির হামলার শিকার হিসেবে উপস্থাপন করতেই এমন সাজানো অভিযোগ নিয়ে উর্মি গণমাধ্যমের সামনে এসেছে।

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net