শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বিকাল ৩:২০

শিরোনাম :
রেমিটেন্স আহরণে রূপালী ব্যাংকের ২ দিন ব্যাপী ক্যাম্পেইন সম্পন্ন সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা বরিশালের দুই উপজেলায় বৈধতা পেলেন ২৫ প্রার্থী ঝালকাঠিতে বেপরোয়া ট্রাক কেড়ে নিল ১৪ প্রাণ বরিশাল সদরে ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাদিস মীরের মনোনয়ন দাখিল বরিশালে তীব্র গরমে নাভিশ্বাস জনজীবন,বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ! বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জসিম উদ্দিনের মনোনয়নপত্র দাখিল বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এসএম জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র দাখিল দুই উৎসবের ছুটি শেষে বরিশাল থেকে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ ঈদ আনন্দ থাকতেই বরিশালে বইছে পহেলা বৈশাখের আনন্দ

ববি ছাত্রীর ওপর হামলার ঘটনায় নতুন মোড়!

dynamic-sidebar

শফিক মুন্সি ::

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) এক ছাত্রীর ওপর রহস্যজনক হামলার ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। হামলার তথ্য অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রক্রিয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করেছে। তিন সদস্যের এ কমিটির প্রধান লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসনুভা হাবিব জিসান। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড.রহিমা নাসরিন ও মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিউদ্দিন সাব্বির। কমিটিকে পাঁচ (০৫) কর্মদিবসের মধ্যে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে রিপোর্ট জমা দেবার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। শনিবার (০৭ মার্চ) বিকেল সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডি ও শৃঙ্খলা উপকমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে, হামলার শিকার দাবি করা ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নামধারী কতিপয় শিক্ষার্থীরা নিয়মিত তাদের হুমকি দিচ্ছে। নিরাপত্তা শঙ্কা নিয়ে তারা বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছে।

হামলার শিকার দাবি করা শিক্ষার্থীর নাম জান্নাতুল নওরীন উর্মি।তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিত বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের (২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (শনিবার) উর্মির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা থানায় কোন লিখিত অভিযোগ জানানো হয় নি। তবে এ ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির খোদ শিক্ষক – শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এমনকি তার রাজনৈতিক সতীর্থরাও বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশায় আছে বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির সচেতন শিক্ষার্থী মহলের পক্ষ থেকে প্রক্টরের কাছে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিভিন্ন গুজবের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

উর্মির দাবি, গত পহেলা মার্চ বিকেল পৌনে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সিঁড়িতে তাকে ঘিরে ধরে একদল মুখোশধারী। এ সময় সে চিৎকার দিলে তার মুখ চেপে ওই ভবনের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে লাঠিসোটা দিয়ে মারধর করে তারা। পরে তার হাতে থাকা জ্যামিতি বক্সের কাটা কম্পাস দিয়ে উর্মির স্পর্শকাতর অঙ্গসহ তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করা হয়। ঘটনার পর কোনমতে বাসায় ফিরে গেলেও নিরাপত্তার অভাবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি না করে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।কিন্তু বাসায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত বুধবার দুপুরে উর্মিকে ভর্তি করা হয় শের-ই বাংলা মেডিকেলের মহিলা সার্জারি-২ ইউনিটে। অন্যদিকে উর্মির বড় বোন মুঠোফোনে জানান, এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে গতকাল (শুক্রবার) রাত ১২ টা ৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত ফোনে হুমকি দেয়।

হামলার সন্দেহ জনক কারণ হিসেবে উর্মির পরিবারের পক্ষ থেকে এর আগের একটি ঘটনার বিচারহীনতাকে দাবি করা হচ্ছে। তারা জানান, ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ রাত ১টা ৫ মিনিটে একটি নম্বর থেকে কল দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘ছাত্রদল করো, ধর্ষণের পর হত্যা করে ব্রিজের ওপর থেকে কীর্তনখোলা নদীতে ফেলে দেব।’ এ ঘটনায় নগরের বিমানবন্দর থানায় একটি জিডি করা হয়েছিল। এরপর ওই জিডি প্রত্যাহার করার জন্য নানাভাবে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তারা মনে করেন, এরই ধারাবাহিকতায় ১ মার্চ বিকেলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে উর্মির ওপর এ জঘন্য হামলা হয়।

অন্যদিকে উর্মির পক্ষ থেকে এ ঘটনার পিছনে গণিত বিভাগের এক শিক্ষক যুক্ত থাকতে পারে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। ঘটনার দিন উর্মির ২০১৫-১৬ বর্ষের ভেক্টর ক্যালকুলাস (এমএইচ ২২২) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৪৫ মিনিট আগে কোন কারণ ছাড়াই উর্মির উত্তরপত্র টেনে নিয়ে হল থেকে বের করে দেন হল পরিদর্শক গণিত বিভাগের প্রভাষক সুজিত কুমার বালা। হামলাকারীরা আগে থেকেই এই শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে ধারণা করছে তারা৷ তবে এমন সন্দেহকে সম্পূর্ণ অমূলক ও বাস্তবতা বিবর্জিত বলে মনে করছেন ওই শিক্ষক। তিনি বলেন, ওইদিন নির্ধারিত সময়ের বেশ আগে উর্মি নিজেই নিজের উত্তরপত্র জমা দেয়। নিজ শিক্ষার্থীর হামলাকারীর সঙ্গে যোগসাজশ করার মতো মানসিকতা কোনো শিক্ষকের থাকতে পারে না।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রেজা শরীফ জানান, তারা ঘটনাটিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে প্রেস রিলিজ দেওয়া হয়েছে।তবে ঘটনাটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে তিনি নিজেও নিশ্চিত নন বলে মতামত দিয়েছেন। গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত তাঁর বিরুদ্ধে উর্মির বড় বোনের আনীত অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি জানান, উর্মি আমার বিভাগের ছোট বোন। গণমাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদ দেখে তার খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য ফোন দিই। তার ওপর হামলার ঘটনা আমার কাছে মিথ্যা মনে হয়েছে। তাই তাকে অনুরোধ করেছি অন্তত সম্মানিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোন মিথ্যা অভিযোগ যেন সে না উত্থাপন করে।

এ ঘটনার সার্বিক ব্যাপার নিয়ে কথা হয়েছিলো তথ্য অনুসন্ধান ও তদন্তের সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটির সদস্য মহিউদ্দিন সাব্বিরের সঙ্গে। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো অভিযোগ না এলেও স্বপ্রণোদিত হয়েই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই কমিটি গঠন করেছে। আমরা বিভিন্ন ক্লু ধরে ঘটনাটির ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করবো। হামলার সঙ্গে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ জড়িত ছিল কিনা এবং ঘটনাটি আসলেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখবো। এদিকে তথ্য অনুসন্ধান কমিটির প্রতি নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতার দাবি জানানো হয়েছে বরিশাল মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে। সংগঠনটির মহানগর সম্পাদক জিয়াউদ্দিন শিকদার বলেন, উর্মির সঙ্গে কারো পারিবারিক বা ব্যাক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল বলে আমার জানা নেই। তাঁর ওপর হামলাকে আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবেই দেখছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আন্তরিকতার সাথে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তবে অবশ্যই নিন্দনীয় এ হামলার পিছনের কুশীলবদের বের করতে পারবে।

অন্যদিকে, শিক্ষার্থী নির্যাতন ও সহিংসতার গুজব প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার প্রক্টরের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।স্মারকলিপি প্রদানকারী শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আলীম সালেহী বলেন, সাম্প্রতিক শিক্ষার্থী লাঞ্ছিতর একটি ঘটনা সবার কাছেই অবিশ্বাস্য লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক্ষেত্রে স্বপ্রণোদিত হয়েই ঘটনাটির তদন্ত করুক।যদি ঘটনাটির সত্যতা পায় তবে আক্রমণকারীদের বিচারের আওতায় আনুক। যদি ঘটনাটি মিথ্যা হয় তবে গুজব সৃষ্টি করে যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় পর্যায়ে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরেছে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। মাটি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী   সুজয় বিশ্বাস শুভ জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনায় এক ধরণের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।অনেকগুলো ঘটনাই মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে যেগুলোর মধ্যে কিছু গুরুতর আবার কিছু ছাত্রছাত্রীদের মনে দ্বিধার সৃষ্টি করেছে।আমরা চাই প্রশাসন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে সত্যিকার ঘটনা তুলে ধরুক। স্মারকলিপি প্রদানকারী শিক্ষার্থীরা জানান তারা আগামী রবিবার বেলা এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখে গুজব বিরোধী একটি প্রতিবাদ সমাবেশেরও আয়োজন করেছে।

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net