মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১:৩৮

শিরোনাম :
সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জসিম উদ্দিনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষনা বরিশালের দুই উপজেলায় বৈধতা পেলেন ২৫ প্রার্থী ঝালকাঠিতে বেপরোয়া ট্রাক কেড়ে নিল ১৪ প্রাণ বরিশাল সদরে ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাদিস মীরের মনোনয়ন দাখিল বরিশালে তীব্র গরমে নাভিশ্বাস জনজীবন,বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ! বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জসিম উদ্দিনের মনোনয়নপত্র দাখিল বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এসএম জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র দাখিল দুই উৎসবের ছুটি শেষে বরিশাল থেকে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ ঈদ আনন্দ থাকতেই বরিশালে বইছে পহেলা বৈশাখের আনন্দ সাংবাদিক মামুন অর রশিদের মায়ের মৃত্যুতে এস এম জাকির’র শোক
পরিবার পরিকল্পনার অপূরণীয় চাহিদা ১২ শতাংশ

পরিবার পরিকল্পনার অপূরণীয় চাহিদা ১২ শতাংশ

dynamic-sidebar

নিজস্ব প্রতিবেদক::

মে ২০১৯ এ প্রকাশিত স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস রিপোর্ট ২০১৮ এ দেখা যায় বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬.৪৬ কোটি। আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৩ শতাংশ এবং আমাদের টিএফআর ২.০৫ শতাংশ। পরিবার পরিকল্পনা সেবার ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি যথেষ্ঠ থাকলেও এখনো শতকরা ১২ ভাগ মানুষের চাহিদা আমরা পূরণে সক্ষম হয় নি। আর এই মানুষের একটি বিশাল অংশের বাস দেশের দক্ষিণাঞ্চল তথা বরিশাল ও খুলনা বিভাগে।

এবারের আইসিপিডি সম্মেলনে তাই পরিবার পরিকল্পনার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার জন্য তাদের এজেন্ডাতে রেখেছে। আমাদের দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা কেন্দ্র রয়েছে। গ্রাম পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিক এবং পরিবার পরিকল্পনার এক রিপোর্টে দেখা গেছে প্রতি মাসে সারাদেশে প্রায় ৩০০০০ স্যাটেলাইট ক্লিনিক পরিচালনা করা হচ্ছে । আমাদের বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হলেও ১২ শতাংশ মানুষের পরিবার পরিকল্পনার চাহিদা পূরণ না হওয়ায় এ অগ্রগতি অচিরে একটা ধাক্কা খাবে বলে বিশেষজ্ঞগন মনে করেন।

অপূর্ণ এ চাহিদার বড় কারণ হলো পার্বত্য এলাকার ৩৫% মানুষের কাছে সেবা পৌছানো সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি হাওড় ও চর অঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকার সেবা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে দেশে ১৪ থেকে ১৯ বছরের প্রজনন সক্ষম মানুষের বাস সর্বাধিক। কিন্তু এই কিশোর-কিশোরী ও তরুণ জনগোষ্ঠীকে সেবা প্রদানের জন্য মাঠ পর্যায়ে তেমন কোন সেবা প্রতিষ্ঠান দৃশ্যমান নয়। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলিতে কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের জন্য একটা সেবা কর্ণার থাকার বিষয়ে সরকারি নির্দশেনা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার কারণে এ সেবা থেকে আমাদের কিশোর-কিশোরী ও তরুণরা বঞ্চিত হচ্ছে।

সারাদেশে ৩০৬ টি কৈশোর বান্ধব সেবাকেন্দ্র রয়েছে যা প্রয়োজনের ‍তুলনায় অপ্রতুল।খুলনা সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর এবং বরিশালের মাঠ পর্যায়ে সরেজমিনে দেখা গেছে যে অধিকাংশ সেবা কেন্দ্রগুলির অবকাঠামো থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুলসেবা, পরিচালনা কমিটির নিষ্ক্রিয়তা, সেবা প্রদানকারীর অপ্রতুলতা সেবার মান উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। আরো দেখা যায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবাগুলির অধিকাংশগুলোতে নেই নারী ও পুরুষের জন্য টয়লেট ব্যবস্থা, নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। কৈশোর বান্ধব সেবা কর্ণার নেই বললেই চলে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রের অবস্থার গুনগত মান উন্নয়ন করা সম্ভব যদি স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি এবং পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর যৌথভাবে কাজ করে তাহলে প্রান্তিক পর্যায়ের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবার মান উন্নয়ন করা সম্ভব।

পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকার যেসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে তার মধ্যে অন্যতম হলো পরিবার পরিকল্পনা। বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার ছেড়ে দেওয়ার হার ৩০% এর বেশি এবং পুরুষদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের মাত্রা ৭.৬%। আমাদের দেশে এখনও বাল্য বিবাহের হার প্রায় ৫৯% এবং আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের হারও বেশ কম। মান সম্পন্ন সেবা প্রদানের প্রধান অন্তরায় হলো প্রতিমাসে ১২০০ থেকে ১৫০০ সেবা গ্রহিতার জন্য রয়েছে মাত্র ১ জন সেবা কর্মী।

স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সঙ্গে মেরিস্টোপস বাংলাদেশ ও স্থানীয় সংস্থা সুশীলনের কারিগরী সহায়তা এ অঞ্চলের পরিবার পরিকল্পনা সেবায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। এখানকার ২১৮টি ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা সেবার মান উন্নয়নে এই সংস্থাগুলো সরকারের সঙ্গে কাজ করেছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বরিশাল জেলার সকল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সেবা প্রদান উপকরণ , অ্যাম্বুলেন্স, অপারেশনাল যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে বরিশালে এক কোটি উনসত্তর লক্ষ ষোল হাজার পাঁচশতত তিপ্পান্ন টাকা এবং পিরোজপুর জেলার জন্য ছেসট্টি লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

যদিও বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায় এই অর্থ বছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা যা কিনা গত অর্থ বছরের ‍তুলনায় বেশি। এত বরাদ্দের একটা বড় অংশ খরচ হয় না। কখনও কখনও দেখা যায় বছরের শেষে এসে তড়িঘড়ি করে কিছু কাজ সম্পাদন করা হয় যার গুনমান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আমাদের দেশে অপূরণীয় চাহিদার একটি বড় কারণ হল বিভিন্ন কারখানাতে নারী কর্মীদের কাজের ক্ষেত্র প্রসারিত হওয়া। নারীদের জন্য কাজের ক্ষেত্র প্রসারিত হলেও তাদের পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়েছে যার কারণে অপূরনীয় চাহিদা বাড়ছে। এই অপূরণীয় চাহিদা পূরণে গার্মন্টস সেক্টরে অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন কোম্পানিগুলোতে কর্মরত নারীদের জন্য তেমন কোন উদ্যোগ চোখে পরেনি। তাদের সময়ের সাথে সেবা কেন্দ্রের সময়ের সমন্বয় না হবার কারণে তারা পরিবার পরিকল্পপনা সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল। মেরিস্টোপস বাংলাদেশের সহায়হতায় সুশীলনের কারগরি সহায়তায় বাগেরহাট পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর বিভিন্ন মাছ কোম্পানির ৫০০০ কর্মীদের পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানের জন্য সপ্তাহে ‍দুইদিন করে সেবা প্রদান করছে।

পরিবার পরিকল্পনা সেবার মান উন্নয়নের মধ্যমে এসডিজি অর্জন করতে সরকার এখন বদ্ধপরিকর। এক্ষেত্রে মেরিস্টোপস বাংলাদেশ বিভিন্নভাবে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মতে দক্ষ এনজিও এবং সিভিল সোসাইটিকে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যকর অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ পরিচালনা কমিটিগুলোকে কার্যকর করার মধ্য দিয়েই প্রত্যাশিত সেবার মান উন্নয়ন সম্ভব, যা কিনা আমাদের এসডিজির লক্ষ অর্জনে সহায়ক হবে।

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net