শফিক মুন্সি::
বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলনের তারিখ ধার্যের খবর এখন পুরনো হয়ে গেছে। আগামী ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সম্মেলন শেষে কারা আসবে শীর্ষপদে সে ব্যাপারেও হয়েছে বিস্তর আলোচনা। তবে এসব কিছুর পরও সম্মেলন উপলক্ষে নগরীকে সাজিয়ে তোলার কাজ এখনও চলছে পুরোদমে। আর সম্মেলনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ চলছে দিনরাত জুড়েই। নগরজুড়ে ব্যানার-ফেস্টুন আর আলোকসজ্জাই জানান দিচ্ছে সম্মেলনকে আকর্ষণীয় করে তোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে দল থেকে।সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ও বর্তমান কমিটির সভাপতি এড. গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলছেন, সম্মেলন উপলক্ষে নগরবাসীকে দেওয়া হবে চমক। তবে এ চমক নেতৃত্ব পরিবর্তনে নাকি সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নগরীর ভিন্নধর্মী সাজেই আবদ্ধ থাকবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু জানান নি তিনি।
তবে দলথেকে সাজসজ্জার কাজের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুনে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কে সাধারণ সম্পাদক করার দাবিও উঠে এসেছে। যিনি কিনা বিসিসি মেয়র হিসেবে ইতোমধ্যে কাটিয়ে ফেলেছেন ক্ষমতার এক বছর। সময়ের গাড়িতে ঠিক সময়ে বসে আর পরিশ্রমের পেট্রোলে সেই গাড়ি চালিয়ে আওয়ামী লীগের প্রচারিত উন্নয়নের মহাসড়ক বরিশালে তিনিই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর তাঁর পরিশ্রমের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল রাজনীতির আধুনিকায়ন। রাজনীতির পুরনো ধারণাগুলোকে বোতল বন্দী করে তিনি বরিশালের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছেছিলেন ডিজিটাল ফেস্টুন – প্যানাফ্লেক্স, সোস্যাল নেটওয়ার্কিং ড্রাইভ, পাবলিক সেলফি ক্রেজ, ফ্রিকোয়েন্ট রোড শো, ফেসবুক কানেক্টিভিটি, পেইড নিউজ ইত্যাদির মাধ্যমে। আশ্চর্যজনকভাবে বরিশালের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল ও গণমাধ্যম কর্মীরা এই শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত হলো নতুনভাবে, ব্যবহার করতে লাগলো তাদের মতামতে। বরিশালের আওয়ামীলীগকে এমনই নতুন পথে পরিচালিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন যেটার স্বাদ এ অঞ্চলের মানুষ আগে কোনোদিন পায় নি।
বর্তমান সভাপতি নেতৃত্ব পরিবর্তনের ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু না জানালেও বিভিন্ন মহলে চলছে শীর্ষ পদগুলো পরিবর্তনের জোর গুঞ্জন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে নতুন কমিটিতে সভাপতি হিসেবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল জাহিদ ফারুক এমপি, সাবেক এমপি জেবুন্নেসা আফরোজ হিরন,বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এ কে এম জাহাঙ্গীর এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি আফজালুল করিমের নাম শোনা গেছে। সাধারণ সম্পাদক পদ পরিবর্তন হলে সেটার একমাত্র দাবিদার যে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ সে ব্যাপারে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও তৃণমূলের কর্মীরা একমত। তবে নগর আওয়ামীলীগের একটি সূত্র বলছে শীর্ষ পদদুটিতে পরিবর্তন নাও আসতে পারে৷ কারণ হিসেবে তারা প্রচার করছে বর্তমান সভাপতি – সম্পাদকের আমলেই নাকি শহরের রাজনীতিতে আওয়ামীলীগের সর্বোচ্চ সফলতা প্রকাশ পেয়েছে৷এই কমিটির মেয়াদকালেই সদর আসন এবং সিটি কর্পোরেশন সহ প্রায় সকল জনপ্রতিনিধিত্বের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীরা বিজয় লাভ করেছে৷ তাই পুরস্কার স্বরূপ এড.গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল ও এড. এ কে এম জাহাঙ্গীর কেই শীর্ষ পদদুটিতে পুনঃবিবেচনা করা হতে পারে।
এসব বিষয়ে নগর সভাপতি জানান, দল যাদের দায়িত্ব দেবে তাদেরকে নিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো। নতুন কমিটির দায়িত্ব কারা পাবে সে ব্যাপারে এখনি কিছু বলার সুযোগ নেই।তবে মেয়াদের সবটুকু সময় নগর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি৷ এক্ষেত্রে বর্তমান সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর জনপ্রিয়তাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন গুলোতে জয়লাভই আমাদের চেষ্টার সফলতা দৃশ্যমান করেছে। সভাপতির এ বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ পেয়েছে বর্তমান সম্পাদক এ কে এম জাহাঙ্গীর এর কথাতেও। তিনি বলেন, কর্মীদের সঙ্গে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র সম্পৃক্ততা আর নগর আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের চেষ্টাতেই এই কমিটির মেয়াদকালে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচন গুলোতে আমরা জয়ী হয়েছি। তৃণমূলের কমিটিগুলো আমরা গ্রহণযোগ্যভাবে ঘোষণা করেছি। এই মেয়াদের সর্বশেষ কাজ ৮ই ডিসেম্বরের সম্মেলন। সেটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে।
বর্তমান সম্পাদকের বরাতে আরো জানা গেছে, সম্মেলন আয়োজন করতে তাদের নেতাকর্মীরা ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে নিজ নিজ এলাকায় সাজসজ্জা করছে৷ সুষ্ঠুভাবে যেন সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হয় সে ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। বর্তমান মহানগর আওয়ামীলীগ সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত।বিভিন্ন দলের সম্মেলনকে ঘিরে নগরীতে চাঁদাবাজির যে ঘটনা ঘটে তাদের বেলায় তেমন কিছু হবে না। যদি কোথাও চুল পরিমাণ অনিয়মের কোনো তথ্য গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে থাকে তবে সেগুলো আয়োজক কমিটিকে জানানোরও অনুরোধ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বরিশাল মহানগর এর ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ২০১৯ আগামী ৮ ডিসেম্বর রবিবার সকাল ১১ টায় বঙ্গবন্ধু উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক ( মন্ত্রী পদমর্যাদা ) আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোঃ আব্দুর রহমান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সাংগঠনিক সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনের প্রাথমিক অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।সভাপতিত্ব করবেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক এড. গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply