শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৬:০৯

ভোলায় ৯ জেলে পরিবারের শোকের মাতম

dynamic-sidebar

আমির হোসেন, চরফ্যাশন ॥ চরফ্যাশন উপজেলার ৩ ইউনিয়নের ৯ জেলের লাশ এলাকায় পৌছার সাথে সাথে স্বজনদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন সময় স্ব-স্ব পরিবার জানাযা শেষে লাশ দাফন করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেলা ১১টায় মোট নিহত ১০ পরিবারের মাঝে ২৫হাজার টাকা করে মোট আড়াই লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সরেজমিন আহম্মদপুরের পূর্ব ফরিদাবাদ গ্রামের ইয়াছিন মাঝির ছেলে নজরুল ইসলাম(২৬) বাড়ীতে গেলে স্বজনদের আহাজারি কান্নার শব্দে নিথর নিস্তব্দ হয়ে যায় পুরো এলাকায়। জ্ঞান হারিয়ে ফেলে নজরুলের পিতা ইয়াছিন মাঝি ও মা ইয়ানুর বেগম। এমন কোন মানুষ দেখা যায়নি যে চোখের পানি পড়েনি।

উদ্ধার হওয়া লাশগুলো হচ্ছে- চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট থানার আবুবক্করপুর ৩নং ওয়ার্ডের মৃত নুরুল হকের ছেলে কামাল দালাল (৩৫), একই এলাকার কাদের মোল্লার ছেলে হাসান মোল্লা (৩৮), আহম্মদপুর গ্রামের কাদের বেপারীর ছেলে নূরনবী বেপারী (৩০), ছলিমন মাতব্বরের ছেলে মফিজ মাতব্বর (৩৫), পূর্ব ফরিদাবাদ গ্রামের ইয়াছিন পাটোয়ারীর ছেলে নজরুল ইসলাম (২৬), একই এলাকার মৃত জামাল বিশ্বাসের ছেলে রফিক বিশ্বাস (৪৪) আবদুল্লাহপুর গ্রামের মোসলেউদ্দিন মাঝির ছেলে কবির হোসেন (৪০), ইসমাইল খানের ছেলে বিল্লল (৩২), চরফ্যাশনের মৃত মুজিবল হক মুন্সীর ছেলে আব্বাস মুন্সী (৪৪) । এছাড়া রোববার রাতে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির নাম খোরশেদ আলম(৪৫)।

সোমবার রা‌তে মেহেন্দিগঞ্জ উপ‌জেলার বাহাদুরপুর এলাকা থে‌কে নদীতে ভাসমান অবস্থায় মাছ ধরার নৌকা থেকে এসব লাশ উদ্ধার করা হয়।

মেহেন্দিগঞ্জ থানার এসআই কমল চন্দ্র দে জানান, রোববার ঝড়ের কবলে পড়ে ২৪ জন জেলেসহ মেঘনায় ডুবে যায় একটি মাছ ধরা ট্রলার। এসময় স্থানীয় কোস্টগার্ডের তৎপরতায় ১৩ জন উদ্ধার হয়। তবে ১১ জন নিখোঁজ ছিল। এই পর্যন্ত ১১জনের মধ্যে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। একজনের খোঁজ মিলেনি। চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীণ বলেন, আমাদের পক্ষ খেকে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সম্মেলন কক্ষে নিহত স্বজনদের মাছে নগদ ২৫হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য একই এলাকার আহম্মদপুর গ্রামের গত ৪ জুলাই জেলে ট্রলারগুলো মাছ শিকারের জন্যে ঘাট থেকে ছেড়ে যায় জেলেরা। ৬ জুলাই মেঘনার বালুয়ার দক্ষিণপাশে চিকন দমা নামক স্থানে নৌ-দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শাহাজান মাঝি ও মনির মাঝির নৌকা ট্রলার ডুবে যায়। কোস্টগার্ড এবং মৎস্য বিভাগের নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে অভিযান চালালেও ঘটনার ৪মাস অতিক্রম হলেও ২০জেলের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য অফিস নিখোঁজদের তালিকা সংগ্রহসহ বিভিন্ন অনুদানের চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে নিহতের ৭পরিবারকে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে নগদ ২৫হাজার টাকা করে অনুদানসহ মোট ২৯ নিখোঁজ, নিহত ও জীবিত জেলে পরিবারকে ৬০কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। বেঁচে আশা দুই জেলেকে চিকিৎসার খরচ ভাবত ২০হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।

দু‘ নৌকার নিখোঁজ জেলেরা হলেন বেলায়েত হোসেন(৩১), সেলিম(৩০), হযরত আলী(৩৩), তসির(৩০), রফিক জমাদার(৩২)ও জিহাদ(২৮)।

আহম্মদপুর এলাকার নৌকার মাঝি শাহাজান(৫০), জামাল মিস্ত্রী(৩৫), রুবেল(২২), আবদুল হাই(২৫), আজগর জমাদার(৫০), শাহাজান(৪০), জসিম(২০), হোসেন(৪০), রবিউল(৩৫), নাছির(৫০), সুলতান মাঝি(৫০), রহিজল(১৫), কবির(৪০)ও জলিল(৪৫)। আহম্মদপুর গ্রামের নিহত রফিকের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, আঙগ ইউনিয়নেরই ৩./৪মাসের মধ্যে নদী খাইছে ৩০ প্রাণ।

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net