শফিক মুন্সি : বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গত পাঁচ মাস যাবৎ নেই ভিসি। গত ০৭ অক্টোবর ট্রেজারারের মেয়াদ পূর্তীতে বর্তমানে সেই পদটিও শূন্য। মেয়াদ শেষে শূন্য রয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদটি। রেজিস্ট্রার পদটি নিয়ে মামলা চলার কারণে সে পদেও নেই কেউ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় নি কোন প্রো-ভিসি। এত নেই এর প্রভাবে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষাও স্থগিত হয়ে গেছে।
নতুন তারিখ কবে দেওয়া হতে পারে সে ব্যাপারে জানে না কেউ। দায়িত্বশীল এতগুলো পদ শূন্য থাকায় একাডেমিক এবং প্রশাসনিক সব কাজেই এসেছে স্থবিরতা। চলমান শিক্ষাবর্ষে বাড়ছে সেশনজট। বন্ধ রয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট সভা। তাই বলা যায় দক্ষিণ বঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় চলছে না একদমই।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ভবনের চারতলায় গিয়ে কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়। তারা সবাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে ক্লাসের। আসাদুর রহমান নামে অপেক্ষারত একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান নানা হতাশার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে তীব্র শ্রেণীকক্ষের সংকট। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাতটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র একটি ক্লাসরুম। দীর্ঘ সাত বছর হয়ে গেলেও এখনও পড়াশোনা শেষ করতে পারে নি এই বিভাগের প্রথম ব্যাচটি। এমন চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগেও। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের জন্য সুপেয় পানি এবং হলগুলোতে বর্জ্য নিষ্কাশনের নেই কোনো কার্যকর ব্যাবস্থা।
২০১৩ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ পর্যন্ত বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীরা পাঁচবার বড় ধরনের আন্দোলনে গিয়েছে। সেসব আন্দোলনের ফলে অনেকের অবস্থান পরিবর্তন হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থা, ব্যাঘাত ঘটেছে তাদের পড়াশোনায়। বিভিন্ন আন্দোলনসহ অন্যান্য কারণে সৃষ্ট হওয়া সেশনজটের মাত্রা কিছু কিছু বিভাগে এক বছরেরও বেশি। সর্বশেষ ভিসি ড.ইমামুল হক বিরোধী আন্দোলনেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থার পরিবর্তনে কিছু কিছু দাবি উঠেছিল। কিন্তু নানা কারণে সেগুলো পূরণ হয় নি। আর এখন বিভিন্ন সংকটে পর্যুদস্ত শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছে নতুন ভিসি নিয়োগের স্বল্পমাত্রার আন্দোলনে।
দ্রুত ভিসি নিয়োগ আন্দোলনের অন্যতম নেতা আহমেদ সিফাত বলেন, দীর্ঘদিন ভিসি না থাকায় নানান সংকটে পড়েছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু দাবি আছে যা পূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি ছাড়া পূরণ সম্ভব নয়। আমরা ইতোমধ্যে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মানববন্ধন করেছি। আশাকরি আমাদের কথা চিন্তা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্রুত সদয় দৃষ্টি দেবেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি আরিফ হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি এবং প্রো-ভিসি নেই। বর্তমানে ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদগুলোও শূন্য। এমতাবস্থায় আমাদের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ ও নতুন সেমিস্টারের পাঠদানে বিগ্ন ঘটছে। এছাড়াও এ মাসের মধ্যে নতুন ভিসি নিয়োগ না হলে সকল শিক্ষক – কর্মকর্তা – কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
ইতোমধ্যে সৃষ্ট হওয়া সংকট থেকে উত্তরণের পন্থা কি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে এই শিক্ষক নেতা বলেন, দ্রুত ভিসি নিয়োগই হবে প্রথম সমাধান। আমি এজন্য মাননীয় সংসদ প্রধান সহ উর্ধতন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। নতুন ভিসি নিয়োগের পরও রাতারাতি এই সংকটগুলো উত্তরণ সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে নতুন ভিসির কর্মচঞ্চলতা এবং আমাদের সবার সম্মিলিত চেষ্টাই বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের উপায় বলে আমি মনে করি।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য ইতিহাসবিদ সিরাজউদ্দীন আহমেদ এর সঙ্গে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, একটা বিশ্ববিদ্যালয় একদম চলছেই না কিন্তু সে ব্যাপারে উর্ধতনদের তড়িৎ কোনো সিদ্ধান্ত নেই এটা সত্যি বেদনার। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাবে যদি ভিসি নিয়োগের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া না হয়।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply