সুনান বিন মাহাবুব, পটুয়াখালী ॥ পটুয়াখালী পৌরসভার বর্তমানে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন পটুয়াখালী চেম্বার-অব কমার্সের সভাপতি ও কৃষক লীগ জেলা শাখার অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মহিউদ্দিন আহম্মেদ। এই বছরের ৫ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন।
তবে দায়িত্ব নিয়েই তিনি নির্বাচনের সময় দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৫ মাসে নিশ্চই বড় কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। তারপরও ইতিমধ্যেই বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করেছেন তিনি। বাকি সমস্যাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন।
পৌরবাসীর প্রত্যাশ পূরণে করণীয় ও পৌরসভা নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন নতুন মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘প্রায় ২৩ কোটি টাকা দেনা নিয়ে দায়িত্ব নিয়েছি। অবৈধ দখলদারিত্ব, লাগাহীন যানজট, ত্রুটিপূর্ন ময়লা নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ অসংখ্য সমস্যা রয়েছে পৌর এলাকায়। এসব সমস্যা দূর করে শহরকে আধুনিক রূপ দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। শহরকে ঢেলে সাজাতে এবং মানুষের বাসযোগ্য গড়ে তুলতে হলে কমপক্ষে ১৮শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন।
উন্নয়নের অংশ হিসেবে পটুয়াখালীর উন্নয়ন কার্যের তালিকা স্বরুপ মেয়র উল্লেখ করেন,
১। বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে ইতিমধ্যে কয়েকটি পাম্প স্থাপন করেছি।
২। রাতের আঁধারে নির্বিঘেœ চলাচলের জন্য সড়ক বাতি স্থাপন করেছি।
৩। শহরকে সার্বক্ষণিক পরিষ্কার রাখার জন্য পরিচ্ছন্নকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
৪। সব দরপত্র পিপিআর অনুযায়ী করা হচ্ছে।
৫। কর্মচারীদের হাজিরা নিশ্চিত করতে পাঞ্জ মেশিন স্থাপন করেছি।
৬। প্রকৌশল দফতরের চলমান প্রকল্পগুলো সঠিক তদারকির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
৭। মশক নিধনে কাজ চলছে।
৮। শহরকে পরিষ্কার রাখতে বেওয়ারিশ পশুদের জন্য খোয়া স্থাপন করেছি।
৯। রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য সঠিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে খেয়াঘাট, হাট-বাজারগুলো ইজারা প্রদান করা হয়েছে।
১০। শহরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে কয়েকটি স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘পৌর এলাকা শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। দখল হয়ে যাওয়া জলাশয়গুলো উদ্ধার করে নানন্দিক রূপ দিতে প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে। যানজট কমাতে নতুন করে অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে না। দখল হয়ে যাওয়া ফুটপাতগুলো পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দফতরের মাধ্যমে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ওভারহেড পানির ট্যাংকি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মালটিপারপাস কমিনিউটি সেন্টার, কমিনিউটি শৌচাগার, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ শিক্ষাবৃত্তি পুষ্টি সহায়তা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে বহালগাছিয়া খালটি দখলমুক্ত করা হয়েছে। ড্রেন, সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ চলছে। গরিব ও দুস্থদের সহায়তায় নিজ উদ্যোগে জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছি। ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দুস্থদের আর্থিক সাহায্য এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে
ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন:
১। পৌরসভা কার্যালয়ের পেছনের দিঘল লেক এবং লোহালিয়া থেকে হেতালিয়া বাঁধ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে গড়ে তোলা হবে।
২। স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল্ড এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বর্জ্য প্রসেসিং প্লান্ট স্থাপন করে সার, বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
৩। শহরকে পরিষ্কার রাখতে শিগগিরই এসএস বাস্কেট প্রদান করা হবে।
৪। পর্যটন নগরী প্রকল্পের আওতায় কলের পুকুরটির ঘিরে ওয়াশজোন, ওয়াকওয়ে, ব্যায়ামাগার, ক্যাফেটরি ও ড্যান্সিং ফোয়ারা নির্মাণ করা হবে।
পটুয়াখালী পৌরসভার যাত্রা শুরু ১৮৯২ সালে। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌরসভার আয়তন ২৬ বর্গ কিলোমিটার। বতর্মান জনসংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার। ভোটার ৪৫ হাজার ২০৬ জন। ১৯৮৯ সালে পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির মর্যাদা লাভ করে।
স্থানীয় কিছু মানুষ জানিয়েছেন, ‘এক শ্রেণির মানুষে শহরের ফুটপাত, ড্রোন, সড়ক, জলাশয়গুলো দখল করে নানা স্থাপনা নির্মাণ করছে। নিউমার্কেট সংলগ্ন ফুটপাত দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। যে কারণে ওই এলাকায় সব সময় যানজট লেগে থাকে। তাই বর্তমান পটুয়াখালী মেয়র মহিউদ্দিন আহাম্মেদের কাছে সাধারন জনগন সুষ্ঠ, সুন্দর বসবাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেছেন।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply