শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ভোর ৫:২৬

পটুয়াখালীর মান্তা শিশুরা ভাসমান বোট স্কুলেই লেখাপড়া শিখবে

পটুয়াখালীর মান্তা শিশুরা ভাসমান বোট স্কুলেই লেখাপড়া শিখবে

dynamic-sidebar

তানজিল জামান জয় ॥ জলেভাসা সম্প্রায়ের নাম মান্তা। তাদের জন্ম-মৃত্যু -বিয়ে সবই নৌকায়। জীবনের শুরু এবং শেষ পর্যন্ত নৌকাতেই কাটে তাদের। যে বয়সে শিশুদের হাতে বই-খাতা-কলম থাকার কথা, সেই বয়সেই ওইসব কোমলমতি শিশুদের দেয়া হয় বৈঠা বাওয়ার শিক্ষা। ৮-১০ বছর বয়স থেকেই নদীতে মাছ ধরতে যায় ওরা। শিশুদের জন্য কোনো বিনোদন ছিলো না। ছিলো না শিক্ষার ছোঁয়া। কিন্তু এখন থেকে সেই শিশুরা লেখাপড়া শিখবে। হৈ-হুল্লোর করে স্কুলে যাবে।
এান্তা শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে দাতাসংস্থা মুসলিম চ্যারিটি হেলপিং দ্যা নিডির (ইউকে) আর্থিক সহায়তায় ও উপকূলীয় উন্নয়ন সংস্থা জাগোনারীর বাস্তবায়নে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের স্লুইসের খালে ভাসমান ‘শিশু বাগান’ নামক একটি প্রাক-প্রাথমিক বোট স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শিক্ষা বঞ্চিত মান্তা শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার জন্য ত্রিশ মাসের জন্য ‘ইআইএমসি’ নামক একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দুপুর ১২ টায় ভাসমান ওই প্রাক-প্রাথমিক বোট স্কুলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী। এ সময় জেলা প্রশাসক ওই স্কুলের নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা চাই তোমরা লেখাপড়া করে মানুষের মত মানুষ হবে। চাকুরিজীবি হবে। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে।’
এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চরমোন্তাজ ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ মিয়ার সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন আহম্মেদ, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম সগীর, বরগুনা জাগো নারীর প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি, মুসলিম চ্যারিটির কান্ট্রি সমন্বয়কারী ফজলুল করিম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) একে সামসুদ্দিন আবু প্রমুখ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চরমোন্তাজ স্লইসের খালে শিশু বাগান নামক ওই স্কুলটি ভাসমান। দেখতে অনেকটা একতলা ছোট লঞ্চের মত। ভেতরে সুসজ্জিত শ্রেণী কক্ষ। বসার জন্য মেঝেতে বেছানো হয়েছে মাদুর। বিনোদনের জন্য রয়েছে টিভি। মান্তা শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ভাসমান স্কুলটিতে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে বরগুনা জাগো নারীর প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি বলেন, ‘মান্তা কমিউনিটির নানাবিধ সমস্যা আছে। আমরা শুধু শিক্ষা দিয়ে শুরু করেছি। এ ছাড়া সরকারি সুযোগ সুবিধাগুলো যাতে মান্তারা পেতে পারে, সেই যোগ সূত্রটা ঘটিয়ে দিব। ’ মুসলিম চ্যারিটির কান্ট্রি সমন্বয়কারী ফজলুল করিম বলেন, ‘কোন শিশুই যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়, এজন্য আমাদের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারিভাবে ফান্ডিং করতে পারে। তিন বছরে এই প্রকল্পে ৬০ লাখের বেশি টাকা ব্যয় হতে পারে। বোট স্কুলটি নির্মাণের প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ’
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মান্তা জনগোষ্ঠীর স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুত তা দৃশ্যমান দেখা যাবে।

আমাদের ফেসবুক পাতা

© All rights reserved © 2018 DailykhoborBarisal24.com

Desing & Developed BY EngineerBD.Net