খান আব্বাস : চিকিৎসার খরচ জোগাতে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) দেড় মাসের শিশু সন্তানকে বিক্রি করার সময় মা’কে আটক করে তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করার দায়িত্ব নিয়েছেন পুলিশের নগর বিশেষ শাখা সিটিএসবি’র এসআই সগির হোসেন। শিশুটির বাবা নিখিল বাড়ৈও মা শিখা বাড়ৈ বরিশাল উজিরপুর সাতলাএলাকার বাসিন্দা।
আজ রবিবার দুপুর ১টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শেবাচিম হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে এসআই সগিরের নেতৃত্বে একটি দল মেডিকেল ইনচার্জ এসআই নাজমুল হুদার সহযোগীতায় অভিযান চালায়। এ সময় শিশু সন্তানের মা’কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে চিকিৎসার খরচ চালাতে শিশু সন্তানকে বিক্রির কথা স্বীকার করেন। বিষয়টি জানতে পেরেই এসআই সগিরের নিজের মানবতাবোধ থেকে তিনি মা ও শিশু সন্তানের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার গ্রহন করেন। তাৎক্ষনিক হাসপাতালের ভর্তি ফাইল নিয়ে চিকিৎসার খোঁজখবর নেন ও ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করে দেন। শিশুটির মা শিখা বাড়ৈ জানান, আমার স্বামী নিখিল বাড়ৈ একজন দিনমজুর। আমাদের সংসার নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা। অত্যন্ত দরিদ্রতার সাথে আমরা দিনাতিপাত করছি। একদিন আমার স্বামীর কাজ না থাকলে পুরোদিন আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়।
সংসারে আমাদের আরো দু’সন্তান রয়েছে। এছাড়া গত দেড় মাস পূর্বে উজিরপুরের সাতলার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে একটি কণ্যা সন্তান হয়। ওই সময় সিজার করাতে আমার স্বামী নিখিল আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ধার-কর্জ করে আমার সিজার ও ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করেন। সেই থেকে আমাদের পরিবারের আর্থিক অনটনের মাত্রা আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায়। একদিকে যেখানে আমার স্বামীর সংসার খরচ চালাতেই হিমশিম খেতে হয় সেখানে কণ্যা সন্তান ও আমার ওষুধ খরচ চালানোটা আমার স্বামীর কাছে একটা বড় বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। কখনো খাবার খেয়ে না খেয়ে আবার কখনো ওষুধ খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করে আসছিলাম। এরই মধ্যে আমি পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে শনিবার আমি শেবাচিম হাসপাতালে গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হলে চিকিৎসকরা আমার হেপাটাইটিস বি হয়েছে বলে জানান।
নতুন করে হেপাটাইটিস বি ধরা পড়ায় ওষুধ কেনাসহ শিশু বাচ্চা ও সংসার খরচ চালানোটা আমার স্বামীর পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব হয়ে উঠছিলো না। চিকিৎসকরা ওষুধ আনতে বললে আমার স্বামীর কাছে টাকা না থাকায় সে ওষুধগুলো কিনে আনতে পারেনি। এভাবে আমরা স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি। পরে আমরা কোনভাবেই টাকা জোগাড় করতে না পেরে বাধ্য হয়ে আমার পেটে জন্ম নেয়া দেড় মাসের শিশুকে বিক্রি করার চিন্তা করি। আমরা বাধ্য হয়েই এমন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেই। নয়তো কোন মা তার গর্ভে ধারন করা সন্তানকে বিক্রি করতে চায়না। আমাদের অভাবের তাড়না এতটাই ছিল যে শিশুটির বয়স দেড় মাস হলেও এখন পর্যন্ত তার একটি নামও রাখতে পারিনি। জীবনের এমন নির্মম গল্প বলতে বলতে একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন শিখা বাড়ৈ। নিখিল বাড়ৈ জানান, আমি ধার দেনা করে এতদিন চিকিৎসার খরচ জুগিয়েছি। একবেলা না খেয়ে থাকতে পারা যায়। কিন্তু অসুস্থ হলে কেউ একবেলা ওষুধ না খেয়ে থাকতে পারে না। বাধ্য হয়েই বাবা হয়েও মেয়েকে বিক্রি করার চিন্তা করেছি। এদিকে পুলিশের নগর বিশেষ শাখা সিটিএসবি’র এসআই সগির হোসেন জানান, শিশু সন্তান বিক্রি করার খবর পেয়ে আমরা সাথে সাথে হাসপাতালে অভিযান চালাই।
এ সময় শিশুটির বাবা নিখিল ও মা শিখাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারি অভাবের তাড়না ও ওষুধ কেনার টাকা না থাকায় শিশুটিকে বিক্রি করার চেস্টা চালিয়েছে তারা। শিশুটিকে বিক্রি করে যে টাকা পাবে ওই টাকা দিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা চালানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। এছাড়া পুরো ঘটনাটি আমার হৃদয়ে দাগ কেটে যায়। আমি আমার নিজস্ব দায়িত্ববোধ থেকেই শিখা ও শিশু সন্তানের চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহন করার দায়িত্ব নিয়ে শিশুটিকে বিক্রি করার হাত থেকে রক্ষা করি।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply