স্টাফ রিপোর্টার : বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়(শেবাচিম) হাসপাতালে ফের চোরের উৎপাত বেড়েছে। এসব চোরদের কাছ থেকে হাসপাতালে কর্তব্যরত কিছু পুলিশ সদস্য নিয়মিত বখরা পেয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, শেবাচিম হাসপাতালে দালালরা রোগী ভাগিয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও কিনিকে নিয়ে যায়।
আর চোররা লাইনে দাঁড়ানো রোগী ও তার স্বজনদের ব্যাগ ও পকেটে থাকা টাকা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে। হাসপাতালের ইমারজেন্সি ও বহির্বিভাগের সামনে চোরদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।সাদিয়া, এক গর্ভবতী নারী। সাথে তার বাবা মো.ছালাম হাওলাদার ও স্বজন। শেবাচিম হাসপাতালের এক্স-রে রুমের সামনে আসতেই চোর চক্রের সদস্যরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। প্রায় ১০ মিনিট তাদেরকে আটকে ধরে নানা কথা বলে ওরা । পরে দেখেন চোররা তার ট্রলির ওপর রাখা ব্যাগ থেকে ২২০০ টাকা নিয়ে গেছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটছে বহির্বিভাগ-আন্তঃবিভাগ ও ইমারজেন্সির সামনে। সম্প্রতি এই হাসপাতালে চোরের উৎপাত বাড়ছে। প্রতিদিন কারো না কারো টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে।
বরিশাল নগরের রুপাতলী হাউজিংয়ের বাসিন্দা বৃদ্ধ আব্দুল বারেক হাওলাদার জানান, চলতি বছরের ২৬ আগস্ট হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে গেলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যায়। ২৮ সেপ্টেম্বর চিহ্নিত চোর হানিফকে হাসপাতাল থেকে কোতয়ালী থানায় নেওয়া হলেও তার বিরুদ্ধে কোন মামলা করা হয়নি। ৩ অক্টোবর হাসপাতাল থেকে ভুয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পরিচয়দানকারী মো.মনিরুজ্জামান ওরফে আবু ফয়েজকে আটক করে পুলিশ।তিনি স্বজনকে কাঙ্খিত সেবা পাইয়ে দিতে হাসপাতালে এমন হুলস্থুল কান্ড ঘটিয়েছেন। পাশাপাশি ওখানকার পুলিশ সদস্যদেরও বোকা বানিয়েছেন ফয়েজ। তিনি শরিয়তপুর জাজিরা উপজেলার বাসিন্দা।অবশ্য বিএমপি’র উপ-কমিশনার(হেড কোয়াটার)আবু রায়হান মোহাম্মদ সালেহ’র পরামর্শে এসআই(সিটিএসবি)সগীর হোসেন ভুয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে ধরিয়ে দিতে সক্ষম হয়।
এসব চোরদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ(বিএমপি) সদস্য শাহজাহান।
হাসপাতালের লিফটে ওঠার সময় শাহজাহানের ৪০০০ টাকা চুরি হয়ে যায়। তিনি বিএমপি’র হিসাব শাখায় মাস্টার রোলে কর্মরত রয়েছেন। বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের শালুকা গ্রামের বাসিন্দা অরুন।তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে ৪৫০০ টাকা চুরি হয়ে যায়।অরুন ওই গ্রামের শামসুল হকের ছেলে।তবে এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করতে ভুক্তভোগীদের নিরুতসাহিত করছে পুলিশ। এমনটাই অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী।
শেবাচিম হাসপাতাল ফাঁড়ী ইনচার্জ নাজমুল হোসেন বলেন,হাসপাতালে (পুলিশ) জনবল সঙ্কট রয়েছে। এখানে প্রতিদিনই চোর ধরা পড়ে। তাদেরকে থানায় সোপর্দ করা হয়।মালামাল উদ্ধার হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা মামলা করতে অনীহা প্রকাশ করে। তাছাড়া এসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করলে,তা হালকা হয়ে যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে
কথা বলার জন্যে প্রথমে কল করা হয় বিএমপি’র মুখপাত্র নাসির উদ্দিন মল্লিকের মুঠোফোনে। তবে তা বন্ধ পাওয়া যায়।কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের সহকারী কমিশনারের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।পরে ডিসি হেড কোয়াটার আবু রায়হান মোহম্মদ সালেহ’র মুঠোফোনে কল করা হলে,তিনি ক্রাইম জোন ডিসি’র সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
সর্বশেষ ডিসি (ক্রাইম জোন) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঞা বলেন, এ পর্যন্ত চুরির ঘটনায় একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাছাড়া চোরদের বিরুদ্ধে এসব চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ডিসি মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঞা বলেন ভুক্তভোগীদের নিরুতসাহীত করার অভিযোগ সঠিক নয়। এরকম ঘটনায় মামলা হওয়া বাধ্যতামূলক।
তিনি বলেন, এসব অপকর্মে কোন পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply